ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, জুন ১৭, ২০২৪ |

EN

দেশে ফিরে গেলে পাবে ৫০ হাজার টাকা * ভাঙড়ের বাগজোলা খালে দিনভর তল্লাশি চালালেও সন্ধান মেলেনি

দেহ ৮০ টুকরো করতে ৫ হাজার টাকা পায় জিহাদ

ওপার বাংলা ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, মে ২৬, ২০২৪

দেহ ৮০ টুকরো করতে ৫ হাজার টাকা পায় জিহাদ
মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে আনোয়ারুল আজিমের দেহ ৮০ টুকরো করে হলুদ মাখিয়ে ভাঙড়ের বাগজোলা খালের পানিতে ফেলে এসেছিল খুলনার কসাই জিহাদ হাওলাদার।

দেশে ফিরে গেলে আরও ৫০ হাজার টাকা দেবে বলেও কথা দিয়েছিল খুনের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশের এক কুখ্যাত দুষ্কৃতকারী আমানুল্লাহ আমান।

কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির হাতে ধরা পড়া কসাই জিহাদ দফায় দফায় জেরায় শনিবার এমনই একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য গোয়েন্দাদের জানিয়েছে। তবে দিনভর ডুবুরি নামিয়ে ও জাল ফেলে ভাঙড়ের বাগজোলা খালে তল্লাশি চালালেও নিহত সংসদ-সদস্যের দেহাংশের সন্ধান মেলেনি। 

অন্যদিকে গোয়েন্দারা বাংলাদেশের তিনজন ও কলকাতার একজনকে জেরা করে জানতে পেরেছেন, এমপি আনারকে হত্যার নেপথ্যে স্বর্ণ পাচারের ২০০ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে দুপক্ষের বিরোধ।

একপক্ষ নিহত এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার অন্যপক্ষ ছিল আনারেরই দীর্ঘদিনের বন্ধু আমেরিকা প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীন। দুজনে মিলেই দুবাই থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে সোনা পাচার করতেন বলে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে। 

অভিযোগ, এমপি আনার নিজের কাছে ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সোনা লুকিয়ে রেখেছিলেন। গত বছর তা জানতে পারেন আক্তারুজ্জামান। এই টাকা ও সোনা ফেরত চাওয়া নিয়েই তাদের দুজনের মধ্যে বিরোধ এবং শেষপর্যন্ত খুনের ঘটনা বলে গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন।

এর আগেও একবার এমপিকে খুনের হুমকি দিয়েছিল শাহীন। তাই এই খুনের মাস্টারমাইন্ড সে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। 

বেনাপোল সীমান্তের বনগাঁ থেকে গ্রেফতারের পর তৃতীয় দফায় শনিবার বিকালেও ভাঙড়ের খালের ধারে নিয়ে আসা হয়েছিল কসাই জিহাদকে। অবশ্য তার আগে খুন এবং তারপর দেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছিল সঞ্জীবা গার্ডেন নামের যে বহুতলের ফ্ল্যাটে, সেখানেও নিয়ে যাওয়া হয় জিহাদকে।

প্রায় ২০-২২ জন গোয়েন্দা অফিসার ও একজন ডেপুটি কমিশনারের উপস্থিতিতে খুনের ঘটনার ‘পুনর্নির্মাণ’ হয়। ঘরের কোথায় প্রথমে এমপি আনারকে বসানো হয়, কিভাবে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তা জিহাদই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেন। আচমকাই বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হলেও পরে মাথায় আঘাত করে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল খুনিরা বলে স্বীকার করেছে জিহাদ।

একজন গোয়েন্দা অফিসারকে আজিম সাজিয়ে গোটা পর্বটি ‘পুনর্নির্মাণ’ করা হয়। অবশ্য গোটা পর্বটি অভিনয় করে দেখানোর সময় গোয়েন্দাদের তরফে জিহাদকে বেশকিছু ছবি দেখানো হয়।

এই ছবিগুলো ইতোমধ্যে ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া তিনজনের, যা কলকাতা থেকে তদন্তে বাংলাদেশ যাওয়া গোয়েন্দারা পাঠিয়েছেন।

এদিন বারবার জিহাদ দাবি করেছে, ‘আমি খুন করিনি, আমি শুধু দেহ টুকরো টুকরো করেছি। আর আমি জানতামই না, উনি একজন এমপি।’ তবে এদিন জিহাদ জানিয়েছে, খুনের সময় ফ্ল্যাটে একজন সুন্দরী মহিলা ছিলেন। গোয়েন্দারা নিশ্চিত ওই মহিলা হলেন ইতোমধ্যে ঢাকায় আজিমের হত্যায় গ্রেফতার হওয়া তরুণী সেলেস্তি রহমান।

দিনভর দফায় দফায় জেরা ও ফ্ল্যাটে ‘পুনর্নির্মাণ’ পর্বে গ্রেফতার কসাই জিহাদ মারাত্মক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্রে খবর। আর এই জেরায় নিহত আনারের দেহ ৮০ টুকরো করে নিউটাউন, ভাঙড় এলাকার নানা জায়গায় ফেলেছে বলে জিহাদ এদিন স্বীকার করেছে। আর এই কাজের বিনিময়ে প্রথম ধাপে ৫০০০ টাকাও পেয়েছে।

ভাঙড়ের খালে ফেলা দেহের সব অংশ উদ্ধার করা যে খুবই কঠিন তা মেনে নিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। কারণ টুকরো টুকরো দেহাংশ খালের পানিতে মিশে থাকা জীবজন্তু খেয়ে ফেলে থাকতে পারে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের।

এদিকে এমপি খুনের ১২ দিন পরেও নিহতের দেহ বা দেহাংশ কোনোটাই না পাওয়ায় খুবই উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দারা। বস্তুত সেই কারণে ইতোমধ্যে গ্রেফতার কসাই জিহাদের বয়ান মেনেই টানা ৩ দিন ধরে কলকাতার লাগোয়া ভাঙড়ের বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

কারণ, ইতোমধ্যে কসাই জিহাদ ও ক্যাব গাড়ির চালক দুজনেই জানিয়েছিল, খালের পানিতে দেহের টুকরো প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এদিনও খালে ডুবুরি নামিয়ে আধা কিলোমিটার দীর্ঘ পানিতে প্রায় ৬ ঘণ্টা তল্লাশি চলে। খালের কচুরিপানাও তুলে ফেলা হয়। সঙ্গে একটি রাবারের স্পিডবোটও নামানো হয়।

গোটা অভিযানটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক অফিসার তদারকি করেন। কিন্তু দিনের শেষে নিহত আজিমের দেহাংশ বা হাড়গোড় কিছুই পাওয়া যায়নি।

অনদিকে ফ্ল্যাটের খাটের কোণায় মাখা রক্তের নমুনা এবং পোশাক ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। কারণ, নিহত এমপির দেহ বা দেহাংশ না পাওয়া গেলে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ হাজির করা খুবই কঠিন হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারী কলকাতার গোয়েন্দারা।

খুনের ঘটনা জানার পরই পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি তদন্তে নেমে বনগাঁ থেকে গ্রেফতার করে জিহাদ ও সিয়ামকে। জিহাদ কসাই। বাংলাদেশের বাসিন্দা হলেও মুম্বাইতে কাজ করত। এমপিকে খুন করার জন্য এদের নগদ টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল। তাই মুম্বাই থেকে কলকাতায় এসেছিল বলে জেরায় তারা স্বীকার করেছে।

খুন করার পর বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালানোর ছক কষেছিল তারা। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছে। খুনের পর এমপির দেহ ৮০ টুকরো করে ভাঙড়ের খালে ফেলা হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে। তাই বৃহস্পতিবার রাত থেকে লাগাতার খালে তল্লাশি চলছে। এখনও কিছু উদ্ধার হয়নি। নিউটাউনের অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে সংজ্ঞাহীন করা এবং পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।

মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী বস্তু দিয়ে এমপির মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। তারপর টুকরো টুকরো করে দেহ গুমের কাজ শুরু হয় বলে জেরায় উঠে এসেছে। কসাই জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে এসে চিনার পার্কের কাছে একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়। খুনের পর হাড়, মাংস পৃথক করে হলুদ মাখিয়ে দেহের টুকরোগুলো নানা জায়গার জলাশয়ে ফেলা হয়। সেই জলাশয়েই এখন তল্লাশি চলছে।