ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণ: বাংলাদেশে কোন দিকে?

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২২

বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণ: বাংলাদেশে কোন দিকে?
সত্তর এবং আশির দশকের মত স্নায়ুযুদ্ধের যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। আবার বিভক্ত বিশ্ব দেখছে বিশ্ববাসী। আর এটি আবার নতুন করে উত্তেজনা এবং এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা তৈরি করছে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি অবস্থান, চীনের এক ধরনের নির্লিপ্ততা, চীন-রাশিয়ার সম্পর্কের উষ্ণতা পুরো বিশ্বকে যেন আবার বিভক্ত করছে, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। আর এইরকম একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনীতি এক জটিল সমীকরণে দাঁড়িয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য একদিকে। অন্যদিকে, রাশিয়া-চীনের মতো দুই প্রভাবশালী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন, অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক শক্তি। দুই মিলিয়ে আবার যেন শীতল যুদ্ধের সময় শুরু হয়ে গেল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আগের মত নেই। একসময় তাদের যে অর্থনৈতিক শক্তি ছিল, সামরিক দর্প ছিল তা চুরমার হয়ে গেছে আফগানিস্তানে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শক্তি বলতে মার্কিন সহায়তা ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। যুক্তরাজ্যও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এখন একটু খর্ব শক্তির অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও বিশ্বের মোড়লিপনায় এই পশ্চিমা দেশগুলো এগিয়ে।

চীন আস্তে আস্তে তাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে সংহত করেছে এবং অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে বিশ্বের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব গ্রহণের এক নীরব চেষ্টা তাদের মধ্যে দৃশ্যমান। আর তার সঙ্গে এখন হাত মিলিয়েছে রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া অনেকটাই মার্কিন মুখাপেক্ষী এবং মার্কিন অনুগত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু পুতিন যেন ক্রমশ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন এবং ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি তার আসল চেহারা উন্মোচন করেছেন। ইউক্রেনে যাইহোক না কেন, এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে একটি বিভক্ত বিশ্ব আজ দৃশ্যমান। এই বিভক্ত বাংলাদেশকে একটি জটিল কূটনৈতিক সমীকরণের মাঝখানে ফেলেছে। বাংলাদেশের কূটনীতির মূল বিষয়বস্তু হলো, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ গত এক দশকে কয়েকটি দেশকে নানা বাস্তবতায় কাছে টেনে নিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, ভালো। যদিও এই সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি ছোঁয়া এখন দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নির্ভরতার হাত বাড়িয়েছে চীনের প্রতি। বাংলাদেশের যে মেগা প্রকল্প গুলো হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোতেই চীনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ রয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ অনেকগুণ বাড়িয়েছে। রাশিয়া বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছে, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের কাজ পেয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া বাংলাদেশের একাত্তরের পরীক্ষিত বন্ধু, তাই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ দ্বিধান্বিত নয়। কিন্তু চীনের সাথে সম্পর্কের গভীরতার কারণে বাংলাদেশে দ্বিমুখী সঙ্কটে পড়েছে। একদিকে, পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশকে এখন সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, ভারতের মধ্যেও এক ধরনের অস্বস্তি দানা বেঁধেছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। সামনে যখন বিশ্বে বিভক্তি আরো বাড়বে, শীতল যুদ্ধের অবয়ব যখন আরো গাঢ় হবে তখন বাংলাদেশের ওপরও চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই বাংলাদেশেকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন পথে যাব, আমাদের গন্তব্য কোথায়। এই মেরুকরণে বাংলাদেশকে এখন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। সেই অগ্নিপরীক্ষায় বাংলাদেশের কূটনীতি পারবে তো?

সুত্র: বাংলাইনসাইডার