ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

রমজানের বাজারে কিনুন আখেরাতের সদাই

ধর্মকথা ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ৪, ২০২৪

রমজানের বাজারে কিনুন আখেরাতের সদাই
আজ ২৪তম রোজা। আর কয়েকদিন পরই ঈদুল ফিতর। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার দিন। বহুদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার দিন। বন্ধু-স্বজন মুখিয়ে থাকে এদিন আমাদের কাছে পেতে। আমরাও ব্যাকুল থাকি তাদের মায়াবী সঙ্গ নিতে। ঈদের এখনো এক সপ্তাহ বাকি, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আরও আগে থেকেই। কবে বাড়ি যাব, কীভাবে যাব, কোন গাড়িতে যাব, ভিড় এড়াব কোন কৌশলে-এসব হলো যাওয়ার দিনের পরিকল্পনা।

মায়ের জন্য কী নেব, স্ত্রীর জন্য কী নেব? সন্তানের কী প্রয়োজন? বাড়ি গিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আগে করব? কোন আত্মীয়ের বাসায় যাব-এসব হলো যাওয়ার পরের পরিকল্পনা। ছুটি উপভোগের বহুদিন আগে থেকে প্রস্তুতির এ মানসিকতা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে-দুনিয়া থেকে আমরা যখন ছুটি নিয়ে কবর দেশের সিটিজেনশিপ অর্থাৎ স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাব, সেজন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুত হয়েছি? পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন মানুষের আমলনামার খাতা খুলে দেওয়া হবে, যখন আকাশের পর্দা খসে পড়বে, জাহান্নামের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে, জান্নাত এগিয়ে আসবে-তখন মানুষ জানতে পারবে সুদীর্ঘ এই ছুটিতে সে কী নিয়ে এসেছে!’ (সুরা তাকভির, আয়াত ১০-১৪)।

দুনিয়ায় কেউ যখন ছুটি কাটায়, অবকাশযাপন করে, সে ছুটির মেয়াদ একদিন না একদিন শেষ হয়। কিন্তু দুনিয়া থেকে কেউ যখন ছুটি পায়, বলা ভালো দুনিয়া যাকে ছুটি দেয়Ñসে ছুটির কোনো মেয়াদ নেই, শেষ নেই। অনন্তকাল থাকতে হবে হায়াতে বরজখ ও হায়াতে আখেরাতে। সুফি খানবাহাদুর আহসানুল্লাহ একবার দার্জিলিং ভ্রমণে গিয়েছেন। ফেরার পথে তিনি নিজের গাট্টি গোছাচ্ছেন। এমন সময় তার মনে এলো, এই যে বাড়ি যাওয়ার জন্য এত গোছগাছ আমার, এত পেরেশানি, এত ব্যস্ততা, এত কেনাকাটা; মাওলার কাছে আসার জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছি? সঙ্গে সঙ্গে সুফি সাহেবের টনক নড়ল। তিনি সচেতন হলেন এবং আফসোসের সুরে বললেন, হায়! জীবনের দীর্ঘ একটা সময় দুনিয়ার সফরের প্রস্তুতি নিতে নিতে শেষ করে ফেললাম; কিন্তু আখেরাতের সফরের কোনো প্রস্তুতিই নেওয়া হলো না। আসলে আল্লাহর ওলিদের বিনয় এমনই হয়। তারা নিজেদের অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চান। কোনো বুজুর্গ যখন বলেন, আখেরাতের কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারলাম না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ভক্ত-মুরিদরা অবাক হয়ে ভাববে, হজরত এত আমল করেও বলছেন কোনো প্রস্তুতি নিতে পারলাম না, তাহলে আমরা যারা আমলহীন জীবনযাপন করছি, আমাদের তো কোনো উপায় নেই। আর এভাবেই বড়দের বিনয়ে ছোটদের শিক্ষা রয়েছে।

বলছিলাম আখেরাতের সিটিজেনশিপের কথা। সেখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে হলে দুনিয়া নামক মুসাফিরখানা বা হাদিসের ভাষায় দুনিয়ার বাজার থেকে ভালো রকম প্রস্তুতি নিতে হবে। আখেরাতের সদাই করতে হবে। আল্লাহতায়ালার ক্ষমা ও রহমত পুঁজি ছাড়া সেদিন কোনো কিছুই কাজে আসবে না। তাই আসুন! মাহে রমজানের এই সোনালি মুহূর্তগুলোকে আখেরাতের সুন্দর সিটিজেনশিপ অর্জনের জন্য কাজে লাগাই। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দিন। আমিন।
 
লেখক :  মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পির সাহেব, আউলিয়ানগর