ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

আলুক্ষেত নিয়ে দিশেহারা কৃষক

কৃষি ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২৪

আলুক্ষেত নিয়ে দিশেহারা কৃষক
জয়পুরহাটের গত কয়েক দিনের অব্যাহত ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের সঙ্গে শৈত্য প্রবাহের কারণে আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এতে করে এলাকার কৃষক চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফলে ওই রোগের কারণে আলুর পাতা ও কালো কালো ফোসকা পড়ে মরে যাচ্ছে তরতাজা সবুজ গাছ। এ রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয় বলে ধারণা করছেন আলু চাষিরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি টানা শৈত্য প্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশার প্রভাবেই অধিকাংশ আলুক্ষেতে ওই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা আলুর ক্ষেতে লেট ব্লাইট বা পাতা মোড়ানো রোগাক্রান্ত আলু ক্ষেতে মেটারিল, মেটাটাফ ও ফোরাম সমম্বিতভাবে স্প্রে করেছেন। সাত দিন পর স্প্রে করেছেন রিভাস নামের কীটনাশক।

জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর  সূত্রে জানা গেছে,  জেলায় প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ওই সব জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে।

কৃষক ও কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন আলুর গাছগুলো সবুজ রং ধারণ করে সজীব হয়ে উঠেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে গত কয়েক দিন থেকে ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় আলু খেতে লেট ব্লাইট বা পাতার মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। সে কারণে জেলার ৫টি  উপজেলার  অধিকাংশ কৃষক আলুক্ষেত রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই কৃষকরা আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও সুফল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। কালাই পুনট গ্রামের  আলু চাষি সুমন সরকার, রফিকুল ইসলামসহ একাধিক কৃষক জানান, তারা প্রত্যকে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ বিঘা করে জমিতে আলু লাগিয়ে থাকেন। কিন্তু আলুর বাড়ন্ত মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়া কারণে লেট ব্লাইট রোগে আলুর ফলন নিয়ে শঙ্কিত তারা।

আক্কেলপুর পৌরসভার চক্রপাড়া গ্রামের আলু চাষি আব্দুস সালাম জানান, তিন পাঁচ বিঘা জমিতে আলু আবাদে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় বিঘা প্রতি অন্তত আরও চার হাজার টাকা খরচ বেড়েছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারের এসিআই সীডের আলু বীজ ডিলার ও সফল কৃষক দুলাল হোসেন সরদার বলেন, তিনি বিভিন্ন জাতের প্রায় ৭৫ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। এরমধ্যে এসিআই সীডের ভ্যালেনসিয়া-১০ জাতের পাঁচ বিঘা জমির আলু ছাড়া সব জমিতেই লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে সব গাছ মরে পচন ধরেছে। বর্তমান বাজারে আলুর ঊর্ধ্বমুখি বাজারেও লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচের টাকাই উঠবে না। আলু গাছ রক্ষায় নিয়মিত ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও রক্ষা হচ্ছে না।

পাঁচবিবি উপজেলার শিরট্রি ভারাহুত গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, তিনি সাড়ে সাত বিঘা জমিতে বি়ভিন্ন জাতের আলুর আবাদ করেছে। এসিআই সীডের ভ্যালেনসিয়া -১০ জাতের আলুতে শুধু রোগবালাই নাই। এছাড়া বাকী সব জমির আলুর গাছ মরে গেছে। এতে অনেক টাক্র লোকসান হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ এনামুল হক  জানান, এ ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ আলুর মড়ক লেট ব্লাইট বা নাবি ধ্বসা রোগ দমনে কৃষকদের করণীয় শিরোনামে বিভিন্ন পরামর্শ লিখে লিফলেট আকারে তা ছাপিয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিকট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। সেই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগও অব্যাহত রেখেছেন। কৃষি সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার জন্য কৃষকদের কৃষি বিভাগের কাছ থেকে  পরামর্শ নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক   কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন  বলেন, ঠান্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত আলু ক্ষেতে ঠান্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেতে ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত আলু ক্ষেতে ৫ থেকে ৭ দিন পর পর প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সিকিউর অথবা ২ গ্রাম একরুবেট এমজেড + ২ গ্রাম ডাইথেন এম অথবা ২ গ্রাম মিলোডি ডিউ + ২ গ্রাম ডাইথেন এম অথবা ১ গ্রাম সিকিউর + ২ গ্রাম মিলোডি ডিউ স্প্রে করলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে। সচেতনতার অভাবে কৃষকরা ওষুধ সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে উপকারের চেয়ে অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হন। কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। সেই সঙ্গে কৃষি সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার জন্য কৃষক ভাইদের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।

ঠান্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী; কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত আলুক্ষেতে ঠান্ডা আবহাওয়া আলু চাষের জন্য উপকারী; কিন্তু একটানা ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এবং দিনরাত্রি তাপমাত্রা উঠানামা করলে এ ফসলে লেটব্লাইট বা নাবি ধবসা রোগ দেখা দেয়। ঘন কুয়াশা থাকলে আলুক্ষেত ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত আলু ক্ষেতে সিকিউর, একরুবেট এমজেড , ডাইথেন এম, মিলোডি ডিউ, ডাইথেন এম স্প্রে করলে সফলতা পাওয়া যাবে। সচেতনতার অভাবে কৃষকরা ঔষধ সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে উপকারের চেয়ে অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হন বেশি।