ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

মুনিয়ার চাঞ্চল্যকর মৃত্যু: আদালত খোলার পর শুনানি

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ১০, ২০২১

মুনিয়ার চাঞ্চল্যকর মৃত্যু: আদালত খোলার পর শুনানি
রাজধানীর গুলশানে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর মামলায় পুলিশের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি হয়নি। নিয়মিত আদালত চালু হলে নতুন নির্ধারিত তারিখে শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন।

না-রাজি আবেদন করা হবে জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত বাদীর ওকালতনামা ও রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করার জন্য আইনজীবী নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করেছেন। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক বিচারিক আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা না হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় পুলিশের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে না-রাজি দিতে সময় আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।

 
গত ১৯ জুলাই গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান আলোচিত মুনিয়া ‘আত্মহত্যা’ প্ররোচনা মামলা থেকে প্রধান আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়াকে ২৯ জুলাই আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়। সে মোতাবেক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আইনজীবীসহ আদালতে হাজির হন বাদী নুসরাত।

তিনি জানান, তার পক্ষে আইজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট শাহ মো. আবদুল কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মাইনউদ্দিন ফারুকী ও অ্যাডভোকেট দুলাল। প্রধান আইনজীবী হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। 
ব্যারিস্টার সরোয়ার জানান, শুনানি না হওয়ায় পুলিশের জমা দেয়া প্রতিবেদন গৃহীত না হওয়া-না হওয়া ও আসামি আনভীরকে অব্যাহতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মামলার বাদী নুসরাত বলেন, পুলিশের জমা দেয়া প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আমি না-রাজি আবেদন করব। তবে গতকাল জমা দিতে পারিনি। বিচারের জন্য সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত লড়ে যাব।


তিনি আরও বলেন, আমি পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে তারা আমার সঙ্গে প্রায় দেড় মাসেও যোগাযোগ করেননি।

গত ২২ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানান, প্রায় তিন মাসের পুলিশি তদন্তে ও ডাক্তারি পরীক্ষায় উঠে এসেছে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। এক্ষেত্রে আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের প্ররোচনার কোনো ‘সম্পৃক্ততা বা দোষ খুঁজে পায়নি’ পুলিশ। ফলে আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে মুনিয়া ‘আত্মহত্যা’ প্ররোচনার মামলার পুনর্তদন্তের দাবি জানিয়ে গত ২৫ জুলাই রবিবার রাতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এতে আসামি আনভীরকে গ্রেফতার কিংবা জেরা না করায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আসামির বিচারের দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিচ্ছেন সচেতন নেটিজেনরা।

গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সেখানে বলা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন মুনিয়াকে। পরবর্তীতে নুসরাত দাবি করেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আনভীর।

মামলা হওয়ার পর পুলিশের আবেদনে আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। তবে তার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের কয়েক সদস্য লকডাউনের মধ্যে বিমান ভাড়া করে দুবাই চলে যান। এ নিয়ে ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কখনো কথা বলেননি আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি। এপ্রিলের শেষ দিকে তার আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হলেও মহামারীর মধ্যে লকডাউনে সে আবেদনের শুনানি তখন আর হয়নি।

মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শফিকুর রহমান। বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে, পরিবার সেখানেই থাকেন। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক লাখ টাকায় ভাড়া নেয়া গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন মুনিয়া। ওই বাসা ভাড়ার টাকা আনভীর দিতেন বলে পুলিশ ও স্বজনরা জানায়।

গুলশানের বাসা থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পাওয়ার কথাও সেসময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

নুসরাত, জানিয়েছেন মুনিয়া ডায়েরি লিখত। সেখান থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বসুন্ধরার এমডি আনভীরকে গ্রেফতারের দাবি জানালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সে সময় বলেছিলেন, তদন্তে প্রমাণ পেলে তখনই তারা ব্যবস্থা নেবেন।