ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

সিন্ডিকেট ভাঙতে পঞ্চগড়ে চালু হচ্ছে চা নিলাম কেন্দ্র

জাবেদুর রহমান জাবেদ, তেতুলিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ২৯, ২০২৩

সিন্ডিকেট ভাঙতে পঞ্চগড়ে চালু হচ্ছে চা নিলাম কেন্দ্র
১৮৫৪ সালে ব্রিটিশদের হাত ধরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল সিলেটে। এর প্রায় ১৫০ বছর পর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়।

বিভিন্ন ফসল আবাদের পাশাপাশি প্রান্তিক এ জেলার চাষিরা ধীরে ধীরে সমতলের চা চাষে ঝুঁকে পড়েন। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ জেলার চা চাষিদের অভিযোগ, সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে সিন্ডিকেটের শিকার হচ্ছেন তারা। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশে চায়ের তৃতীয় নিলাম বাজার। আর এতে করে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দেখা গেছে চা চাষিদের।

দুই দশক আগে শুরু হয়ে বর্তমানে চায়ের নীরব বিপ্লবে বদলে গেছে পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। এক সময়ের চরম দারিদ্র্যে জীবন কাটানো এ অঞ্চলের মানুষরা এখন কিছুটা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে তিন ফসলি জমিতে চা আবাদ করে দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সবার।

পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া উপজেলার চা চাষি সোহেল রানা বলেন, ৫ বছর আগে চা চাষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দেড় বিঘা জমিতে চা বাগান করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অব্যাহত লোকসানে চা বাগান কেটে ফেলেছি।

আব্দুর হাই নামে আরেক চাষি জানান, লোকসানে পড়ে চা বাগান কেটে ভুট্টা আবাদ করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছি। তবে বর্তমান অবস্থায় অন্য চাষিরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এদিকে তেঁতুলিয়ার শালবাহান এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষি হারুন বলেন, পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার চালু করা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। কারণ একটি সিন্ডিকেটের দল ন্যায্য মূল্য থেকে আমাদের সবাইকে বঞ্চিত করেছে।

মানিক মিঞা ও আব্বাস আলী বলেন, নিলাম বাজারে চা কারখানা মালিকরা যেন উন্নতমানের চা তোলে। কারণ কারখানায় উৎপাদিত উন্নতমানের চা কর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে নিম্নমানের চা নিলামে তোলায় চাষিরা প্রকৃত দর পাওয়া থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিল। আশা করছি আমরা এবার কাঁচা চা পাতার ন্যায্য মূল্য পাবো।

পঞ্চগড় সদরের সাজেদা রফিক টি ফ্যাক্টরির পরিচালক আরিফুজামান সুমন বলেন, এই নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে চা চাষিসহ সবাই আমরা উপকৃত হবো। কারণ আগে নিলাম কেন্দ্র না থাকায় আমাদের চট্রগ্রামে নিতে অনেক খরচ বহন করতে হতো। এখন তা কমে আসবে।

ইন্ডিগো ব্রোকারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি এই নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সবাই সুফল পাবে। আর নিলামের মাধ্যমে শতভাগ চা বিক্রি হলে সবাই সঠিক দাম পাবে।

এদিকে বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, কাঁচা চা পাতা উৎপাদন ভালো হলেও চায়ের গুণগত মানে পঞ্চগড় কিছুটা পিছিয়ে। এই নিলাম কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে সবাই তাদের ভুল ত্রুটি জানতে পারবে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম  বলেন, এই নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে অনেকটাই সুফল পাবে এ জেলার প্রান্তিক চা চাষিরা। একই সঙ্গে সরকারি রাজস্ব আয় কয়েকগুণ বাড়বে। আর এ জেলার ৮ হাজারের অধিক চা চাষির দাবিসহ সব সিন্ডিকেট ভাঙতে এই নিলাম কেন্দ্র অনেকটাই ভূমিকা পালন করবে। চা চাষিরা তাদের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার ন্যায্য মূল্য পাবে। পঞ্চগড়ের চা শিল্প আরোও বেশি এগিয়ে যাবে।

পঞ্চগড়-০২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেন, আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পঞ্চগড়ে উপস্থিত থেকে দেশের প্রথম অনলাইন ভিত্তিক চায়ের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন। এতে করে চাষি থেকে শুরু করে সবাই চায়ের দামের মূল্য সরাসরি দেখতে পাবেন।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দশকে এ জেলার প্রায় ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে গড়ে ওঠে ছোট বড় আট হাজারের বেশি চা বাগান। পঞ্চগড় জেলার ২৪টি কারখানায় চলতি অর্থবছরে (২০২৩ ও ২০২৪) ২ কোটি কেজি চা উৎপাদনের আশা করছে চা বোর্ড। তবে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮০ লাখ ২৮ হাজার ৮৫০ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এদিকে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার।

এদিকে উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০টি ব্রোকার হাউজের মধ্যে পাঁচটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আটটি ওয়্যারহাউজের মধ্যে দুইটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে