ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

আম্রপালির দাপটে ফজলি চাষিদের মাথায় হাত

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, আগস্ট ৯, ২০২৩

আম্রপালির দাপটে ফজলি চাষিদের মাথায় হাত
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম্রপালি আমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফজলি আমের দাম কমেছে। ফলে ফজলি আম চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। আর এতে তাদের মাথায় হাত দেয়া ছাড়া কেনো উপায় নেই। আম চাষিরা বলছেন, মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাবলী থাকায় আম্রপালির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া একই সময়ে বাজারে ফজলি আম আসায় দাম কমেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রচলিত আম বাগানে প্রায় ১৫ শতাংশ ফজলি আম গাছের আবাদ হয়।

দেশের বৃহত্তম আমের বাজার কানসাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে গুটি জাতসহ বিক্রি হচ্ছে পাঁচ রকমের আম। রকমভেদে বাজারে প্রতি মন আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬ শত টাকা দরে। কানসাট আম বাজারে সব ধরনের গুটি জাতের আম মণ প্রতি ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা, লক্ষণভোগ আম ৮ শত থেকে ১৫০০ টাকা আর বারি-৪ আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত। 

আম বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ফজলি আমের দামের তুলনায় আম্রপালির দামই বেশি। বাজারে প্রতি মণ ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬ শত টাকা দরে। অন্যদিকে আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে।

শনিবার শিবগঞ্জ উপজেলার কালুপুরের রায়হান আলী কানসাটে বিক্রির জন্য ফজলি আম এনেছিলেন ৫ মণ। কিন্তু বাজারে ফজলি আমের চাহিদা কমে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেও বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, মানুষ ফজলি আমের চেয়ে আম্রপালি খেতে বেশি পছন্দ করছে। ফলে ফজলি আমের চাহিদা কমে গেছে। 


তিনি আরও জানান, বর্তমান বাজারে ফজলি আমের মণ রকমভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬ শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর ফ্রুট ব্যাগিং করা ফজলি আমের মণ ১ হাজার ৬ শত থেকে ১ হাজার ৭ শত টাকা। যা খরচের তুলনায় অনেক কম।

কানসাট শ্যামপুর এলাকার তৌহিদ নামের এক আম ব্যবসায়ী জানান, আম বাজারে ফজলি ও আম্রপালি আম একসাথে বাজারে নামার কারণে দাম কমেছে। দিন দিন ফজলি আমের চাহিদা কম থাকায় লোকসানে পড়ছেন চাষীরা। আর এতে অনেকই তাদের বাগানের আম গাছ কেটে ফেলছেন। তিনি জানান বর্তমান বাজারে আম্রপালী প্রতি মণ আম ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিকের দাবি, বাগানের গাছে এখনও ৮০ শতাংশ ফজলি আম ঝুলছে। কিন্তু ফজলি আমের চাহিদা কমে যাওয়ায় দীর্ঘ দিন থেকে লোকসান গুনছেন চাষি ও বাগান মালিকরা। যতদিন ফজলি আমের প্রসেসিং করে বাই প্রোডাক্ট না হবে অর্থাৎ আচার, আমসত্ত্ব জাতীয় খাবার তৈরি করে বাজারজাত না হবে ততদিন তারা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন আমের চাষ হচ্ছে। এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জের উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে বিক্রি হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আমের হাট থাকায় ব্যাপারীদের আনাগোনা বাড়ছে। একই সাথে কানসাট আম বাজারে ব্যাপারীরা কম আসছেন। ফলে ফজলি আমের চাহিদা কমেছে, চাষিরাও কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ফজলি আমের দাম বৃদ্ধি করতে বিশ্ববাজারে আম রপ্তানিতে ব্যাপক জোর দিচ্ছেন জেলা কৃষি বিপননের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন আম রপ্তানিকারকের সাথে এসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই বিদেশের বাজারে রপ্তানি হবে ফজলি আম।

কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, আম্রপালি আমের গুণগত মান এবং মিষ্টতার কারণেই এর চাহিদা প্রচুর। বাগান থেকেই আম বিক্রি করা যাচ্ছে। বাজারে আসার চাহিদা খিবই কম। তাছাড়া ফজলির দরপতনে চাষিরা ফজলি আমের অনেক গাছ কেটে আম বাগানগুলিতে আম্রপালি আমের চাষ বাড়াচ্ছেন। কিন্তু এটা কোন মতেই কাম্য নয়। কারণ এই আম জিআই সনদ প্রাপ্ত। যা আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুনাম ধরে রাখবে।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে ফজলি আমের চাষাবাদ হচ্ছে।  এতে গাছ রয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৩০টি। অন্যদিকে জেলায় ২ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে  ২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৫ টি গাছে আম্রপালি চাষ হচ্ছে। এবার জেলায় ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হচ্ছে। চলতি বছর আমের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।