ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

তিন যুগ ধরে মুলি বাঁশের বেড়া তৈরি করছেন বোরহান উদ্দিন

জিহাদ হোসেন রাহাত, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, জুলাই ২৬, ২০২৩

তিন যুগ ধরে মুলি বাঁশের বেড়া তৈরি করছেন বোরহান উদ্দিন
মুলি বাঁশের বেড়া তৈরি করে দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় পার করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। জন্মেছেন ১৯৭১সালে। জন্মতারিখ এবং মাস মনে না থাকলেও মানুষ হিসেবে বেশ দক্ষ এই বৃদ্ধ। ছোটোবেলায় দশ বছর বয়সে আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে ৮০র দশকে শুরু করেন মুলি বাঁশের বেড়া তৈরির কাজ। সময় হিসেব করলে এ কাজে তিনি পার করেছেন প্রায় দীর্ঘ ৪৩ বছর। 

তখনকার সময়ে এই শিল্পের ব্যাপক কদর ছিলো লক্ষ্মীপুরসহ পুরো বাংলাদেশে। ঘর-বাড়ি তৈরিতে দেশের অধিকাংশ মানুষের পছন্দের একমাত্র উপকরণ হিসেবে মুলি বাঁশের তৈরি বেড়া খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি পায় জনপ্রিয়তাও। অবশ্য উল্লেখিত সময়ের বহু আগে থেকেই মুলি বাঁশের বেড়ার ব্যবহার হতো লক্ষ্মীপুরসহ দেশের সকল স্থানে। তবে একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এসেই এ শিল্প হারাতে শুরু করে নিজের গুরুত্ব। মুলি বাঁশের বেড়ার পরিবর্তে মানুষের আগ্রহের জায়গা দখল করে নেয় টিনের তৈরি দুই ও চৌ-চালা ঘর ও ইটের তৈরি পাকা দালান। তবে কালের বিবর্তনে এটির কদর কমলেও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছেন অনেক কারিগররা। নিজেদের জীবিকার তাগিদে এ কাজ করলে এটি যে হারানো শিল্প টিকিয়ে রাখার মাধ্যম- সেটি হয়তো জানা নেই এখানকার অনেক শিল্পীর। তাদেরই একজন বোরহান উদ্দিন। বয়স ঠেকেছে ৫৩ বছরের কোটায়।

নিজ উপজেলা রামগঞ্জে বেড়া তৈরির কাজ শিখলেও বর্তমানে কাজ করছেন জেলার রায়পুর উপজেলার রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের টিএনটি রোড এলাকায়। স্থানীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি পিস মুলি বাঁশ ৩০-৬০ টাকা দরে সংগ্রহ করে সেগুলো কিছুটা শুকানোর পর রাখেন পানিতে ভিজিয়ে। এভাবে চলে দিন পনের সময়। পরে আবার তুলে শুরু করেন বেড়া তৈরির কাজ। মুলি বাঁশের তৈরি এই বেড়া স্থানীয় পর্যায়ে মুলির বেড়া নামে পরিচিত। বোরহান উদ্দিন ছাড়াও টিএনটি রোডের এই উন্মুক্ত বেড়ার কারখানায় কাজ করেন আরো দুজন।

তিনি এখানকার প্রধানমিস্ত্রী হলেও এ কারখানা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন আবদুল আজিজ নামে আরেক অভিজ্ঞ শিল্পী। আজিজও এ পেশার সাথে জড়িত প্রায় ২৫ বছর যাবৎ। তারা নিজেদের তৈরিকৃত বেড়া প্রতি হাত বিক্রি করেন ৫০ টাকা দরে। নেন প্রয়োজন মাফিক বেড়া তৈরির ফরমায়েশও। মুলি বাঁশের বেড়া তৈরির পাশাপাশি সুর্যের পখর রৌদ্রতাপ থেকে বাঁচতে নিজেদের মাথার উপর তৈরি করেছেন পটল, ঝিঙেসহ বেশ কয়েকটি সবজির চাউনি। বলতে গেলে সবুজ কারখানায় বসে দেশের সোনালী দিনের স্মৃতি জিইয়ে রাখছেন মুলি বাঁশের বেড়া তৈরির কারিগর বোরহান উদ্দিনরা।