ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

চায়না দুয়ারির ফাঁদে বিনাশ হচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছ

শিশির খাঁন, সদরপুর-চরভদ্রাসন প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৩, ২০২৩

চায়না দুয়ারির ফাঁদে বিনাশ হচ্ছে দেশিয় প্রজাতির মাছ
পদ্মা নদীঘেঁষা ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল ও কোলসহ নদনদীতে কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারি নামের একপ্রকার ফাঁদ ব্যাবহার করে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে চলছে এক শ্রেনীর অসাধু মাছ শিকারিরা। 

জানা যায়, এই চায়না দুয়ারি দৈর্ঘে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট লম্বা হয়। এই দুয়ারির দুই দিকে মুখ থাকার পাশাপাশি এক অভিনব পদ্ধতিতে প্রস্তুত করায় উজান ও ভাটি সব দিক থেকে মাছ ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারেনা। ঘন ফাঁসের এই দুয়ারিতে পোনা মাছ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকা পড়ায় ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা মৎস্য দপ্তর হতে প্রায় এক-দুই কিলোমিটারের মধ্যেই লোহারটেক কোল ও পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে চায়না দুয়ারি দিয়ে নিধন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সারা বছরই বিভিন্ন স্থানে এই ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করলেও বর্ষা মৌসুমে যেন অসাধু শিকারিরা মাছ ধরার মহোৎসবে নামে। জোয়ারের পানির সঙ্গে ডিমওয়ালা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খাল, বিলসহ বিভিন্ন স্থানে বংশ বিস্তারের জন্য আসার গতি পথে পাতা হচ্ছে এই ফাঁদ।

নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ নিধন বন্ধে কোন অভিযান না হওয়ায় এসব অসাধু মাছ শিকারিরা কার্যত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য শিকারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে এই দুয়ারি চীন হতে আমদানী করা হতো বলে দামও ছিল চড়া। একেকটি দুয়ারি কিনতে প্রায় ছয়-সাত হাজার টাকা খরচ পড়ত। বর্তমানে একই আদলে আমাদের দেশের বিভিন্ন কারখানায় তৈরী হচ্ছে এই ফাঁদ। একেকটি দুয়ারির মূল্য আগের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এই ফাঁদ ব্যাবহার করে নিধন করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

এই ফাঁদের ব্যাবহারের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'লোহার চিকন তার ও ঘন সুতা দিয়ে তৈরি এমন ফাঁদে নদী, নালা, খাল বিলের ডিমওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ায় আমাদের মৎস্য সম্পদ এখন হুমকির মুখে পড়ছে। আমাদের লোকবলসংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় দ্রুত এই চায়না দুয়ারি বিনষ্টে আমরা অভিযানে নামব।

চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাউছার বলেন, পোনা মাছ বাজারে দেখে মনটা খারাপ হয়। এই নিষিদ্ধ ফাঁদ ব্যবহারকারীদের ধরতে আমরা স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে মাঝে মাঝেই  ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে ওই মাছের বংশ ধ্বংশ করায় ব্যবহৃত ফাঁদ অনেক চড়া মূল্যে বিক্রয় করে।

মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রশাসন কী পদক্ষেপ গ্রহন করবে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী মোর্শেদ মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, 'ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ হতে চায়না দুয়ারির ব্যবহার বন্ধে কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উঠান বৈঠক করে জেলেদের মোটিভেট করা হচ্ছে। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।