ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

খননের পরও হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র

মোঃ রাসেল হোসেন, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, জুন ১৪, ২০২৩

খননের পরও হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র
মুখ থুবড়ে পড়েছে ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজ। পাঁচ বছর মেয়াদি খননকাজ প্রকল্পের চার বছরে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই! এ সময়ে খননকাজে ব্যয় হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা।

ধীরগতির খননকাজের পরও ব্রহ্মপুত্র নদে প্রত্যাশিত পানির প্রবাহ ফিরে আসেনি। উল্টো খননকাজের অনেক এলাকায় নতুন করে ছোট বড় অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। নদের অনেক জায়গায় হাঁটুসমান পানি। হেটেই নদ পার হচ্ছেন অনেকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের বিরাট অংশজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। কোথাও হাঁটুসমান পানি। তাতে হেঁটেই পার হচ্ছে অনেকে। অনেক জায়গায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ নালার মতো। 

ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর, জেলখানার ঘাট, পুলিশ লাইন, জয়নুল আবেদীন উদ্যান, কাচারিঘাট, জুবলি ঘাট, থানার ঘাট কালিবাড়িসহ বেশ কিছু এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের এমন মরণদশা। 

ময়মনসিংহবাসীর প্রধান দাবি ছিল পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ খননের। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার চলতি মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পরই ব্রহ্মপুত্র নদ খননের প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়। বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ব্রহ্মপুত্র নদে শুষ্ক মৌশুমেও ১০ ফুট পানির প্রবাহ থাকবে। প্রশস্ত হবে ৩০০ ফুট। এমনটি হলে এতদঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। বদলে যাবে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাড়ের মানুষের জীবনধারা। নৌ পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। উন্নয়ন ঘটবে মৎস্য সম্পদের। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া কমে আসবে। 

কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর শেষ হওয়ার পর এখনো কোন কিছু দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহবাসী। 
এ রকম পরিস্থিতিতে নাগরিক আন্দোলন নামে সংগঠন নদের খনন কাজ সঠিক ভাবে করার জন্য নদীর মাঝে হাটু পানিতে দাড়িয়ে “নাগরিক চিৎকার” নামের প্রতিবাদের আয়োজন করে। 

জনউদ্যোগ নামে একটি সংগঠন খাগডহর ও কাচারিঘাট এলাকায় মিডিয়া ক্যাম্পেইন করেছে। 

এর আগে খননের নামে ব্রহ্মপুত্র নদকে মেরে ফেলা হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে কাচারিঘাট এলাকায় হাঁটুসমান পানিতে নেমে ‘মৃতের চিৎকার’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছে ময়মনসিংহ শহর ও কয়েকটি উপজেলা থেকে আসা তরুণ তরুণীরা। এ সময় তারা বিষাদের গান গেয়ে প্রতিবাদ জানায়। 

এছাড়াও গত ৭ মে ময়মনসিংহ নগরীর শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে নাগরিক আন্দোলন মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে পরিকল্পিতভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ খননের দাবি জানায়, গত ১৪ মে নাগরিক আন্দোলন কার্যালয়ে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আদায়ে পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে এবং গত ২১ মে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে নাগরিক আন্দোলন। 

সংস্কৃতি কর্মী শামীম আশরাফ বলেন, শিল্পের মানুষের চিন্তা নিয়ে সমন্বিত ভাবে ব্রহ্মপুত্রকে বাচাঁতে মৃতের চিৎকার আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি অরো বলেন, খননের পর ব্রহ্মপুত্রে শুধু বালু আর বালু। আমরা এমন বালুর সৌন্দর্য চাই না। আমরা চাই স্রোতোস্বিনী ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রতীকী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা ব্রহ্মপুত্রকে মেরে ফেলার প্রতিবাদ করেছি। মৃত ব্রহ্মপুত্রের হয়ে চিৎকার করছি। আমরা চাই, আমাদের এ চিৎকার কারও কাছে পৌঁছাক।’

জনউদ্যোগের জেলা আহবায়ক এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন বলেন, গত বছর নদ খনন প্রকল্পের পরিচালক বলেছিলেন চলতি বছরের নদে মাঝারি লঞ্চ-স্টিমার চলবে,কিন্তু এখন তার উল্টো অবস্থা, নদের অনেক স্থানে এক হার্টুঁ পানি আবার কোথাও কোথাও হেটেঁ পার হওয়া যায়। যেখানে শুস্ক মৌসুমে অনন্ত হাটুঁ পানি থাকার কথা সেখানে এখন হাটুঁ পানি। নদ খনন করে পূর্বে অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে পরিকল্পিত ভাবে নদকে মেরে ফেলা হচ্ছে। যাতে সরকারের অর্থের অপচয় না হয় এবং পরিকল্পিত ভাবে নদ খনন করে ব্রহ্মপুত্র নদ আবার যেন তার যৌবন ফিরে পায় সেটাই আমার চাই।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম জানান, দখল, দূষণ আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয় খনন কাজ। প্রায় দুই হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ২২৭ কিলোমিটার খনন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত কোনো খনন হয়নি। যে নদ দিয়ে এই সময়ে লঞ্চ-স্টিমার চলার কথা সেই নদ মানুষ হেঁটে পার হচ্ছে। আমরা কখনো এমনটি চাইনি। নাগরিক সমাজ মনে করে এখানে নদ খননের নামে অর্থ লুটপাট হয়েছে। তাই নদের নাব্য ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

বিআইডব্লিউটিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ব্রহ্মপুত্র খননের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মোহসিন মিয়া জানান, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগস্থল খননের বিষয়টি তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। প্রথমেই এই সংযোগস্থল খনন করা হলে পানির প্রবাহের তোড়ে পুরো খনন বাধাগ্রস্ত হবে। আর তাই খনন শুরু হয়েছে ভাটি থেকে উজানের দিকে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহ দৃশ্যমান হবে বলে জানান তিনি।