স্পোর্টস ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, নভেম্বর ৫, ২০২১
স্কটল্যান্ডের
বিপক্ষে হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ
গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে সুপার
টুয়েলভে উঠে। ওমানের বিপক্ষেও
মাহমুদউল্লাহরা পড়েছিলেন চরম চাপে। এ
পর্বে রীতিমতো ‘ছেড়ে দে মা,
কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা রিয়াদ-মুশফিকদের। সেই চাপ সামলে
সুপার টুয়েলভে পা রাখার পর
আবার হারের বৃত্তে। শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষেও পরাজিত লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
হাতে বাকি আর একটাই
ম্যাচ। জিততে না পারলে ওমান
ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে দুই জয় পুঁজি
করে ফিরতে হবে দেশে। সুপার
টুয়েলভে জয়বিহীন থাকা আর একটা
জয় পাওয়ার মধ্যেও তাই আছে বড়
ফারাক। আশা নিভে গেছে
আগেই, সমালোচনা হানা দিচ্ছে চারপাশ
থেকে।
প্রথম
চার ম্যাচের চারটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে বড় ব্যবধানে। বাংলাদেশ
চেয়েছিল শেষটা অন্তত জয়ে রাঙাতে। কিন্তু
মুখের কথা বুমেরাংয়ের মতো
ফিরে এলো। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচটাও হেরে
ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করল বাংলাদেশ। মূল
পর্বে ৫ ম্যাচ খেলে
দল হারল পাঁচটিতেই!
বাংলাদেশ
ক্রিকেট দল টানা ৪
হারের যন্ত্রণা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার
(৪ নভেম্বর) ফের মাঠে। চলতি
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
নিজেদের শেষ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ
রিয়াদের দল মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়ার।
টস হেরে ব্যাট করতে
নেমে যা করল দল,
সেটা ভুলে যেতে পারলেই
বরং ভালো। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের সামনে সোজা বাংলায়-লজ্জায়
ডুবালেন টাইগাররা। দল মাত্র ৭৩
রানে অলআউট হলো। তারপর ৬
ওভার ২ বলে কেবল
২ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া হেসে-খেলে তুলে
নেয় পুরো ২ পয়েন্ট।
৮২ বল হাতে রেখেই
পায় জয়।
অথচ
বাংলাদেশ কি না দুবাইয়ে
ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল মিরপুরের
স্মৃতি। যেখানে গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়া
দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে
৪-১ এ হারিয়েছিল
বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে দুবাইয়ের
বিমান পথ ৩,৫৪৫.৯৯ কিলোমিটার। এই
বড় দূরত্বটা থাকল ক্রিকেট মাঠেও।
দুবাইয়ের অনেকটা ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেন
ব্যাট করতেও ভুলে গেলেন। উইকেটে
আসা-যাওয়ার এই খেলাটা নিজেরা
ফের দেখলে নিশ্চিত করেই লজ্জায় পাবেন!
আরেকটু
হলে তো টি-টোয়েন্টিতে
নিজেদের সর্বনিম্ন সংগ্রহের লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ।
সেটা অবশ্য টপকালো। আগের সেই দুঃস্বপ্ন
৭০ রান এসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। সেটি ২০১৬ সালে
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মহুতির গল্পটা প্রায় একইরকম। উইকেটে এসেছেন আর ফেরত গেছেন
সাজঘরে। আসলে ঘরে ফেরার
তাড়াটাও ছিল হয়তো। শুক্রবার
সকালেই ফিরে যাওয়ার কথা
বাংলাদেশে। তার আগে হোটেল
রুমে দ্রুত গিয়ে ব্যাগ গোছাবেন
বলেই কী খেলা শুরুর
তিন ওভার না যেতেই
দল হারাল তিন উইকেট! ব্যর্থতার
গল্প সমৃদ্ধ করে সেই লিটন
দাস ফিরলেন কোন রান না
করেই। সৌম্য সরকার ৫ আর মুশফিকুর
রহিম ১ রান করে
এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দিলেন-২০ ওভারের ক্রিকেটে
তার দিনও বুঝি ফুরাল!
সেমিফাইনাল
স্বপ্ন দেখিয়ে বিশ্বমঞ্চে পা রাখলেও বাংলাদেশের
ভেতরের কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছিল প্রথম পর্বেই। ঘরের মাঠে স্লো
অ্যান্ড স্পিনিং ট্র্যাকে খেলতে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় ওমানের
উইকেটে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই গলদঘর্ম টাইগাররা। হেরে বসে প্রথম
ম্যাচ। এরপর ওমান এবং
পাপুয়া নিউগিনিকে হারানো গেলেও সুপার টুয়েলভে হার সবকটি ম্যাচে।
সেমি-স্বপ্ন যে বড্ড বাড়াবাড়ি
ছিল, সুপার টুয়েলভের প্রথম চার ম্যাচে বাংলাদেশের
হতশ্রী পারফরম্যান্স তা প্রমাণ করেছে।
একদমই
তাই, বিশ্বকাপের আগে ঠিকঠাক উইকেটে
প্রস্তুতি নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
টিম ম্যানেজম্যান্টের উদ্ভট সিদ্ধান্তই বলতে হবে, তারা
কীনা নগদ লাভের আশায়
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও জলাঞ্জলি দিয়েছে। স্লো সেই উইকেটে
অজিদের পর নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়েছিল
বাংলাদেশ। যা কোন কাজেই
আসেনি বিশ্বকাপে। তাইতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচের আগের দিনই বাংলাদেশের
স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ
মিরপুরের উইকেটের উন্নতি চাইলেন। এমন উইকেটে খেলে
হয়তো ঘরের মাঠে কিছুটা
সাফল্য পাওয়া যায়, আদতে লাভ
হয় না কিছুই।
ঘরের
বাইরে বাংলাদেশের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে ডুল বলেন, ‘তাদের
এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা
কি বৈশ্বিক আসর বা বিশ্বকাপে
প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চায় নাকি
তারা ঘরের মাঠে সিরিজ
জিততে চায়। এই ব্যাপারে
তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চলমান
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সব জায়গাতেই বাংলাদেশের
দুর্বলতার জায়গা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। দলের
অন্যতম সেরা বোলার মুস্তাফিজুর
রহমান পুরো টুর্নামেন্টেই নিজের
ছায়া হয়ে ছিলেন। ছয়
ম্যাচে নিয়েছেন আট উইকেট। লিটন
দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররাও
ছিলেন ধারাবাহিক ব্যর্থ। পাশাপাশি হরহামেশাই ক্যাচ মিসের মহড়া দিয়েছেন বাংলাদেশের
ফিল্ডাররা। যার ফলাফল সুপার
টুয়েলভে সবকয়টা ম্যাচেই হার। এই হারের
বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে
টাইগারদের উন্নতির বিকল্প নেই। তবে সবমিলিয়ে
এবারের বিশ্বকাপ থেকে দেড় লাখ
ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায়
প্রায় ১ কোটি ২৮
লাখ টাকা নিয়ে ফিরছে
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল!