ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ |

EN

বাংলাদেশ ক্রিকেটে পলিটিক্স ঢুকে গেছে

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ৩০, ২০২১

বাংলাদেশ ক্রিকেটে পলিটিক্স ঢুকে গেছে
বাংলাদেশের মানুষের আশা, ভালোবাসা আর গৌরবের নাম ক্রিকেট ও ক্রিকেটার। দুঃখ-কষ্ট-বেদনায় জর্জরিত ছোট্ট এই দেশের ষোলো-সতেরো কোটি মানুষের আনন্দ-গৌরবের উপলক্ষ এনে দেয় ক্রিকেট। ফলে মানুষ ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ভালোবাসে হৃদয় দিয়ে। মানুষের আবেগ-ভালোবাসার ক্রিকেটে ‘অশনি সংকেত’র ইঙ্গিত গত কিছুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে। ক্রিকেটে এই ‘অশনি সংকেত’র পেছনে রাজনীতির একটি বড় ভূমিকা আছে।

ম্যারাডোনা জমানার লাতিন আমেরিকার ফুটবলের দিকে একটু নজর দিয়ে দেখেন। ম্যারাডোনা বা আর্জেন্টিনার ফুটবলকে শাসকরা কীভাবে ব্যবহার করেছে। আমাদের এই অঞ্চলে পাকিস্তান, ভারত বা বাংলাদেশে ক্রিকেটের সাফল্যকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখাতে চান। ভারতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হওয়ার কারণে নানা প্রতিকূলতা তারা মোকাবিলা করতে পারে। খেলোয়াড় ও খেলার ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনরা তো তাদের ক্রিকেটকে প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছে। রাজনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটও।

বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড কখনো রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের ঊর্ধ্বে ছিল না। কিন্তু ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ-যোগ্যরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেই সময়ও নিয়োগ রাজনৈতিক বিবেচনাতেই হয়েছিল। দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা-দক্ষতাও বিবেচিত হয়েছিল। তারপর থেকে যোগ্যতা-দক্ষতার দিকটি তেমন একটা বিবেচিত হতে দেখা যায়নি। এই যেমন ধরেন, বাংলাদেশের কোচ ডমিঙ্গোর কোচিং ক্যারিয়ারের যোগ্যতা কতটুকো, বিসিবি সভাপতি কিংবা ক্রিকেটারদের বাহিরে বিসিবি নির্বাচক, কর্মকর্তাদের ক্রিকেট জ্ঞানই বা কতটুকো? মাশরাফি তো কয়েকদিন আগেই বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হলো রিহ্যাব সেন্টার। এখানে সব অযোগ্য লোকদের ধরে এনে বসানো হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকুরী না পাওয়া লোকদের বিসিবিতে কোচিং স্টাফ বানানো হচ্ছে।

ক্রিকেটের এই পলিটিক্সের বাহিরেও ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপের মত ম্যাচগুলোতে ম্যাচের চেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলন। দলের তারকা ক্রিকেটারদের ঝাঁজাল মন্তব্যে জ্বলে উঠছে বিতর্কের সলতে। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকে শেষ—কিছুই আসলে ঠিক হচ্ছে না বাংলাদেশের। পাওয়ার প্লেতে বড় দলগুলোর ওপেনাররা যখন সাফল্যের পথে প্রথম সোপান হিসেবে দেখছেন, তখন বাংলাদেশের টপ অর্ডার সেটিকে বানিয়ে ফেলছেন সংগ্রামের এবড়োখেবড়ো পথ।

আর সেই লাগাতার ব্যর্থতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলেও রেগে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা। খারাপ খেললে সমালোচনা হবে—এটাই স্বাভাবিক। সেটার জবাব দেওয়ার মোক্ষম উপায় যখন ব্যাট-বলই হওয়ার কথা, তখন তাঁরা দিচ্ছেন মুখে। যদিও নাসুম আহমেদ ইংল্যান্ড ম্যাচের পরে বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, হচ্ছে না।’ চেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে এখন বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও চেষ্টার ফল পায়নি মাহমুদউল্লাহর দল।

এদিকে টানা ব্যর্থতার পুরস্কারও পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপটা শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের ছয় নম্বর দল হিসেবে। তবে ইতিমধ্যে আট নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভে হারের পরই দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। বুধবার তারা হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছেও। আন্দাজ করাই যাচ্ছে, নতুন করে র‌্যাংকিং প্রকাশ হলে তাতে আরও অবনতি দেখা যাবে বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে একটি ম্যাচও জিততে না পারলে চলে যাবে দশেরও নিচে।

অথচ আমাদের এই ক্রিকেটের উন্নতি শুরু ১৯৯৭ সাল থেকে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে হারানো অনুমিতই ছিল; কিন্তু পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয়াটা ছিল স্বপ্নেরও অতীত। তখনকার পাকিস্তান দলটির দিকে তাকালেই ভয় ধরে যেত যে কারও। সেখানে বাংলাদেশ তাদের হারিয়েছে ৬২ রানের ব্যবধানে! উন্মাদনার পালে হাওয়াটা জোরালোভাবে লেগে গেলো। ২০০০ সালে পেয়ে গেলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা। সবাই তখন থেকেই বলতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের উন্নতি আর ঠেকায় কে? উন্নতি যে হয়নি তা বলবো না, বিস্তর উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছে, এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে। সাফল্য তো কম নয়। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলকে টেস্টে পরাজিত করেছে, ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে।

উন্নতির পারদ এমন এক জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, হুজুগে বাংলাদেশের মানুষ এখন আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অযোগ্য কর্মকর্তাদের আশার বানী নিয়ে বাঁচে, ক্রিকেট খায়, ক্রিকেট নিয়ে ঘুমায়। ঘুম থেকে জেগে ওঠে আবার ক্রিকেট! ক্রিকেট! করে। কিন্তু আকাশে উড়তে উড়তে হঠাৎ ডানা ভেঙে মাটিতে পড়ে যাওয়া পাখির মতো অবস্থা আমাদের বর্তমান ক্রিকেটের।

খবর: বাংলা ইনসাইডার