ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

টুঙ্গিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, অক্টোবর ২৭, ২০২১

টুঙ্গিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ। উপজেলার কৃষকেরা এ পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন । বর্তমানে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ী, মিত্রডাঙ্গা, জোয়ারিয়া, পাথরঘাটা, চাপরাইল, রুপাহাটি সহ পাটগাতী ও বর্নি ইউনিয়নের প্রায় ৮শ কৃষক করছেন ভাসমান বেডে চাষাবাদ।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে কৃষি বিভাগের ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে আধুনিকভাবে ভাসমান বেডে চাষাবাদ শুরু হয়। প্রথমে গোপালপুর ইউনিয়নের অল্প কিছু কৃষক মাত্র ২০ হেক্টর জমিতে এই চাষাবাদ শুরু করে। বর্তমানে উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮শ কৃষক ভাসমান ধাপের চাষাবাদ করছে ও এবছর প্রায় ১৪শ ভাসমান বেড তৈরি হয়েছে।

 

আগে কৃষকেরা ভাসমান বেড ইচ্ছামত লম্বা-চওড়া করতো। আর বেডের উপর উঠেই পরিচর্যা করতো ফলে বেড গুলো দ্রæত নষ্ট হয়ে  যেত। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আধুনিক উপায়ে  চাষাবাদ করছে কৃষকরা। নির্দিষ্ট চওড়া ও দৈর্ঘ্যের বেড নির্মাণ করে সুন্দর করে সাজিয়ে  রাখা সহ পরিচর্যা ও ফসল তোলার জন্য ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এতে দ্রæত ফসল নষ্ট হচ্ছে না ও দীর্ঘ সময় ভাসমান বেডে চাষাবাদ করতে পারছে কৃষকরা। এছাড়া দীর্ঘসময় পানিতে চাষাবাদের শেষে ভাসমান ধাপের কম্পোস্ট বা জৈব সার উঁচু জায়গায়  তুলে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে শীতকালীন সবজিতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে শতভাগ নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে কৃষকেরা।

 

বন্যা বাড়ি গ্রামের কৃষক শ্রীবাস বিশ্বাস, বরেন্দ্রনাথ মন্ডল, মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নৃপেন বিশ্বাস বলেন, জোয়ারিয়া গ্রামের নরোত্তম বালা বলেন, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ জমি নিচু। একারনে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এজন্য স্বাভাবিক চাষাবাদ সম্ভব হয় না। জমিতে পানি জমে থাকায় আমাদের হাতেও কোন কাজ থাকে না। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে অল্প কিছু কৃষক ভাসমান বেডে চাষাবাদ শুরু করি। পরবর্তীতে সল্প খরচে আমরা বেশ লাভের মুখ দেখি। তখন অন্যান্য কৃষকেরা ভাসমান ধাপের উপর চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়। আগে শুধু মাত্র গোপালপুর ইউনিয়নে ধাপের উপর চাষাবাদ শুরু হলেও বর্তমানে পাটগাতী ও বর্নি ইউনিয়নে ধাপের উপর চাষাবাদ শুরু করেছে। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে বেশ কিছু কৃষককে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে ও বাকি কৃষকদের ভাসমান বেডের চাষাবাদে উৎসাহিত করার জন্য ভাসমান বেডের উপকরণ নেট, বাঁশ সহ বিভিন্ন সবজির বীজ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল উদ্দিন বলেন, এবছর টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় প্রায়  ১৪শ ভাসমান বেডে চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা। এই বেডে সবজি হিসাবে ঢেড়শ, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি, গিমা কলমি, কচু, লাউ, শশা, করলা ও মসলা হিসাবে হলুদ ও কাঁচামরিচের চাষাবাদ করা হয়। ইতিমধ্যে এসব বেড থেকে সবজি ও মসলা তোলা শুরু হয়েছে। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এছাড়া যে ভাসমান বেড গুলো থেকে সবজি ও মসলা তোলা হয়নি সেগুলো কৃষি বিভাগের কর্মীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। যাতে বেডে কোন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ না করে। আগামীতে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ আরো জনপ্রিয় উঠবে বলেও আশাবাদী তিনি।