ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অবমাননার শাস্তি

কাইয়ুম সরকার,শিক্ষানবিশ আইনজীবী | আপডেট: মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৬, ২০২১

প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অবমাননার শাস্তি
ধর্ম হলো  মানুষের পবিত্র বিশ্বাস ও হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা পবিত্র ভালোবাসা।  এই বিশ্বাসকে ধারণ করে মানুষ মানসিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি পেয়ে থাকে। যেকোন ধর্মের বিশ্বাসী লোকের নিকট তার ধর্ম শ্রেষ্ঠ। সমাজের মানুষের এইরূপ বিশ্বাসযোগ্য কোন অনুভূতিতে আঘাত বা ধ্বংস করার মাধ্যমে ধর্মাবলম্বী মানুষের  প্রতিহিংসা ও ক্ষোভের সঞ্চার করতে এমন কোনকিছু করার অধিকার  রাষ্ট্র বা ধর্ম কোন ব্যক্তিকে দেয়নি।

ধর্মীয় অবমাননার সংঙ্গা আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে দেওয়া নেই।তবে কেউ যদি কোন   ধর্মের অবমাননা করে তার  কি শাস্তি হবে সেই সম্পর্কে আমাদের  দণ্ডবিধি ১৮৬০ সালের আইনের অধ্যায় ১৫, ধারা ২৯৫- ২৯৮ বলা আছে।  এই আইনটি তৈরি করেছে ব্রিটিশ সরকার।১৮৬০ সালের আইন অনেক পুরনো একটি আইন।এই আইন যেই সময় প্রনয়ণ করা হয় তখন ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ। ব্রিটিশরা এই দেশ শুধু শোষণ  করেনি শাসনও করেছে তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা দিয়ে।

দণ্ডবিধির ধারা ২৯৫  অনুযায়ী কোন ব্যক্তি এমন কোনকোনকিছু করে যা কোন শ্রেণির  মানুষের বিশ্বাস যে তা পবিত্র, কোন শ্রেণির ব্যক্তির  বস্তুর ধ্বংস, অনিষ্ট বা অপবিত্র করলে সেই ব্যক্তি এই ধারা অনুসারে দুইবছর পর্যন্ত  কারাদন্ডে দন্ডিত   (সশ্রম বা বিনাশ্রম) বা অর্থদন্ডে দন্ডিত   হবে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে  এবং তা জামিনযোগ্য। 

২৯৫ক ধারা অনুযায়ী যে ব্যাক্তি বাংলাদেশের নাগরিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর হানার উদ্দেশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে ও বিদ্বেষমূলক কথা বা লিখত শব্দ বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে কোন শ্রেণির ধর্মীয় বিশ্বাস কে অবমাননা করে সেই ব্যক্তি দুইবছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত হবে( সশ্রম বা বিনাশ্রম) বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে । 

দণ্ডবিধির ধারা২৯৬ অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি ধর্মীয় সমাবেশে গোলমাল সৃষ্টি করে সেই ব্যক্তি তার একবছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত হবে (সশ্রম বা বিনাশ্রম) বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। 

এই তিনটি ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে উপেক্ষাকৃত ছোট অপরাধ থেকে বড় অপরাধের শাস্তি কম।ধার ২৯৫,২৯৫ক এবং ধারা ২৯৬ এই তিনটি ধারার মধ্যে ২৯৬ ধারায় যেই অপরাধ  তা অন্য দুইটি ধারা থেকে গুরুতর প্রকৃতির। 

আপরাধী মনকে বড় অপরাধের প্রতি উৎসাহিত করা। তাই আইন প্রনয়ণকারী ব্যক্তিদের কে এই আইন সংশোধনের দ্রুতই উদ্যোগ নিতে হবে। শাস্তি পরিমান বাড়াতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

দণ্ডবিধির ধারা ২৯৭ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি কোন শ্রেণির ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, সমাধিস্থান ইত্যাদিতে অবমাননা করার উদ্দেশ্য অনধিকারে প্রবেশ করে তাহলে সেই ব্যক্তি একবছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত হবে (সশ্রম বা বিনাশ্রম) বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। আবার ইইচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানিবার জন্য দৃষ্টিগোচর শব্দ উচ্চারণ করে বা অঙ্গভঙ্গি করে তাহলে সেই ব্যক্তি একবছর পর্যন্ত কারাদন্ডে দন্ডিত হবে  (সশ্রম বা বিনাশ্রম) বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।  

সুতরাং ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত শাস্তি বিধানটি দ্রুতই সংশোধন করা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সহনশীলতা বজায় রাখা।

 আমাদের সংবিধানের ২ক অনুচ্ছেদে সকল ধর্মের সমমর্যাদা ও সমঅধিকারে বিষয়টি বলা আছে এবং ১২ অনুচ্ছেদে ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নে  বিষয়ে বলা আছে। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ৪২ অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বধীনতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।