ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ই-কমার্স প্রতারণা: দায় কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ৯, ২০২১

ই-কমার্স প্রতারণা: দায় কার?
প্রযুক্তির উৎকর্ষের একটি আশীর্বাদ ই-কমার্স। ই-কর্মাসের নাম শুনলেই মনে আসে অ্যামাজন, আলিবাবা, ইবে কিংবা ফ্লিপকার্ট এর কথা। এই ই-কমার্স গুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-কর্মাস মানেই ছিল ইভ্যালি, আজকের ডিল, আলেশা মার্ট, পিকাবো, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, বাগডুম, অথবা ডট কম সহ আরও বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। তবে বাংলাদেশের এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আশীর্বাদ নয়, বরং প্রতারণার এক জমজমাট কারখানা। যে কারখানায় প্রতিনিয়ত আসছে নিত্যনতুন প্রতারণার কৌশল। তবে ই-কমার্স এর এই প্রতারণায় এখন প্রশ্ন উঠেছে, এর দায় কার? গ্রাহক নাকি সরকারের?

ই-কমার্সে দায় নিয়ে আজ শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দায়ভার সরকার নেবে না। দেশে অন্তত ২০ হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। গ্রাহকরা কম মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা কম দামে পণ্য কেনার সময় তো সরকারকে জানায়নি। তাদের (গ্রাহকদের) ক্ষতির দায় সরকার নেবে কেন?

ই-কমার্স প্রতারণার বিরুদ্ধে সম্প্রতি সরকারের অভিযান শুরু হয় ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করা ইভ্যালি। লোভনীয় সব অফারে স্বল্প সময়েই ক্রেতাদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে মোহাম্মদপুর থেকে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একে একে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠে। তার মধ্যে রয়েছে- ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ, নিরাপদ ডটকম, আলেশা মার্ট সহ আরও অনেকগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সেই ধারাবাহিকতায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকার চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা হয়। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ডটকমের পরিচালক ফারহানা আফরোজ এ্যানিকেও (২৯) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সর্বশেষ, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের হেড অব সেলস (কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) অফিসার মো. হুমায়ন কবির নীরব ওরফে আরজে নীরবকে গ্রেফতার করার পর তার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দায়ভার সরকার নেবে না। তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং গ্রাহক উভয়ই দায়ী। গ্রাহকরা লোভনীয় সব অফারে স্বল্প মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের এই চিন্তাটুকু আসা উচিৎ যে, পণ্যের মূল্য কীভাবে এত কমে দিবে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, এতে তাদের লাভ কিংবা তাদের পলিসি কি সেইসব ক্ষতিয়ে দেখা উচিৎ গ্রাহকদের। তাদের লোভের জন্যই এই ই-কমার্স প্রতারণা আরও বেড়েছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা একইভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারী করা এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে এসে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা জনগণকে দেয়া এবং সকল প্রকার লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা। এতে করে বাংলাদেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রতারণার কারখানা থেকে মুক্ত হয়য়ে আবারও আশীর্বাদ হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুত্র: বাংলা ইনসাইডার