ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা : ৫৫ জনের নামের তালিকা প্রকাশ

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, অক্টোবর ২১, ২০২২

পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা : ৫৫ জনের নামের তালিকা প্রকাশ
পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের পাশপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে সমতলে নামধারী জঙ্গি সংগঠনও। এতে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যেমন বেড়েছে, তেমনি নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে পাহাড়বাসির মধ্যে। তবে এসব জঙ্গি ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংস করতে চিরুনি অভিযানে নেমেছে যৌথবাহিনী। 

এরইমধ্যে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সাত সদস্যকে অস্ত্রসহ অক্ষত অবস্থায় আটক করেছে র‌্যাব-৭। 

আটককৃতরা হলেন, সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক (৩১), মো. ইমরান হোসেন সাওন (৩১), মো. কাওসার শিশির (৪৬), মো. জাহাঙ্গির আহমেদ জনু (২৮), মো. ইব্রাহিম আলী (১৯), মো. আবু বক্কর সিদ্দিকি বাপ্পী (২২), মো. রুফু মিয়া (২৬)। 
আটক কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) তিন সদস্য হলেন, জৌথান স্যাং বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯), মাল সম বম (২০)। অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ আস্তানা। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

শুক্রবার সকাল ১১টায় বান্দরবানে র‌্যাব কার্যালয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া পরিচালক কমান্ডার মো. খন্দকার আল মঈন জানান, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৫৫ যুবককে এ সংগঠনের সাথে যুক্ত করেছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা রাঙামাটি ও বান্দরবানকে বেচে নিয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সহায়তায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা জানতে পেরেছি দেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে ৪, নেত্রকোণা এক, নোয়াখালী এক, পটুয়াখালী ৬, ফরিদপুর ২, রবিশাল ৩, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া এক, ময়মনসিংহ এক, মাগুরা এক, মাদারীপুর ২, সিলেট ৭, সুনামগঞ্জ এক, কুমিল্লা ১৫, খুলনা এক, চাঁদপুর এক, ঝালকাঠি ২, ঝিনাইদহ এক, টাঙ্গাইল এক, ঢাকা থেকে চারজনসহ মোট ৫৫ জন যুবক জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার যোগদান করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এসব সদস্যদের জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য রাঙামাটি ও বান্দরবানের দূর্গম অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। 

তারা হলেন, মো. দিদার, তাহিয়াত চৌধূরী, আহাদ, মশিউর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, আরিফুর রহমান, মো. নাঈম হোসেন, শামীম মিয়া, আল আমীন ফকির, আমিনুল ইসলাম, নাজমুল আলম নাহিদ, শেখ আহমদ মামুন, মো. আস সামি রহমান, সাদিক, হাসান সাইদ, বায়েজিত, জুয়েল মুসল্লী, ইমরান বিন রহমান শিথিল, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আল-আমীন, ইমরান, শিশির আহমেদ, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মেদ, মো. আবু জাফর, যুবায়ের, নিহাল আব্দুল্লাহ, মাহমুদ তাকয়া, আমীর হোসেন নাহিদ, সালেহ আহমদ, আব্দুস সালাম নিরব, ইয়াছিন বেপারী, মো. মিরাজ সিকদার, ওবায়দুল্লাহ সাকিব, জহিরুল ইসলাম, আবু হুবায়রা, আবুল বাশার মৃধা, আকতার সরদার, রিয়াসাদ রাইয়ান, হোসাইন আহমদ, আবু হুরাইরা, তানজিল রহমান, মো. আল মামুন, নিজাম উদ্দীন হিরন, আব্দুল রাজ্জাক খান, সোহেল মোল্লা, নুর মোহাম্মদ জুয়েল, রায়হান, আল আমিন সরদার, জহিরুল ইসলাম, তাওয়াবুর রহমান, লোকমান, জাকারিয়া, রিয়াজ শেখ। 

আর তাদের নেতৃত্বে রয়েছে সংগঠনটির প্রধান মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ (আমির)। এছাড়া দাওয়াতী শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মাইমুন, সামরিক শাখার প্রধান মাসকুর রহমান, সহকারী সামরিক প্রধান মারুফ আহমেদ, অর্থ ও গণমাধ্যম ও সমতল শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম মাহফুজ। 

রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন ও বান্দরবানের রুমা, রোয়াং ছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া, শিপ্পি পাহাড়, রনিন পাড়া ও কেউক্রা ডং পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে সাত জঙ্গি সদস্যসহ তিন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের আটক করতে আরও জঙ্গি আস্তা খুঁজতে এখনো যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

জঙ্গি আস্তানা থেকে এরইমধ্যে ৯টি বন্দুক, ৫০টি গুলি, ৬২টি কার্তুজ, ৬টি হাত বোমা, পিস্তল একটি ও দেশিও অস্ত্র একটি, ২টি কার্তুজ বেল্ট, ১০টি মানচিত্রসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।  

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বেশ কয়েকটি নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট সংক্ষেপে ইউপিডিএফ, এমএন লারমা অর্থাৎ সংস্কারপন্থি, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, মারমা লিব্যারেল পার্টি (মগ পার্টি) ও কুকি চিন ফ্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। 

এবার তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ারও। পাহাড়ের গহিন বন জঙ্গলকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে জঙ্গিরা।