নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৫, ২০২১
আজ
৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ
ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহিদ শেখ কামালের
৭২তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৪৯
সালের এই দিনে তদানীন্তন
গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে যখন শেখ কামাল
জন্মগ্রহণ করেন, তখন বাংলার মানুষের
মুক্তির আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার কারণে বঙ্গবন্ধু থাকতে পারেননি পরিবারের সঙ্গে। অধিকাংশ সময় বাবাকে কাছে
না পেলেও বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করেই
মাত্র ২৬ বছর বয়সে
শাহাদত বরণ করেন শেখ
কামাল।
শেখ
কামালের শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু
তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ২০৯ পৃষ্ঠায়
লিখেছেন :“একদিন সকালে আমি ও রেণু
বিছানায় বসে গল্প করছিলাম।
হাচু (শেখ হাসিনা) ও
কামাল নিচে খেলছিল। হাচু
মাঝে মাঝে খেলা ফেলে
আমার কাছে আসে আর
‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল
চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাসিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু
আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা
বলি।’ আমি আর রেণু
দু’জনেই শুনলাম। আস্তে
আস্তে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে
ওকে কোলে নিয়ে বললাম,
‘আমি তো তোমারও আব্বা’।”
১৯৭৫
সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে
ঘাতকের নির্মম গুলিতে শহিদ হওয়ার আগে
ছোট জীবনে দেশ ও দেশের
মানুষের জন্য অনেক অবদান
রেখেছিলেন শেখ কামাল। শাহীন
স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও
ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক
পাশ করার পর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স
পাশ করেন তিনি। বাংলাদেশের
শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনে শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ছায়ানটের সেতারবাদন বিভাগের ছাত্রও ছিলেন শেখ কামাল।
স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির
পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সমাজ চেতনায় তাদের
উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের
ক্ষেত্রে শেখ কামাল ছিলেন
প্রথম সারির সংগঠক। ‘স্পন্দন’ নামে এক শিল্পীগোষ্ঠী
গড়ে তুলেছিলেন শেখ কামাল তার
বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে। এছাড়া তিনি ঢাকা থিয়েটারের
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অভিনেতা হিসেবেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে
প্রতিষ্ঠিত শেখ কামাল শৈশব
থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন
খেলায় প্রচণ্ড আগ্রহ রাখতেন। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম
ক্রীড়া সংগঠন ও আধুনিক ফুটবলের
প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শহিদ
শেখ কামাল আমৃত্যু এই দেশের নান্দনিক
ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম
অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড়
সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণশিবির গড়ে তুলতেন এবং
তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৪
জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’
দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানার সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী
ও আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে
বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
স্বাধীন
বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ
কামাল। স্বাধীনতার পর ক্যাপ্টেন শেখ
কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে
লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।
শেখ কামাল ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। মহান মুক্তিযুদ্ধ, ছাত্ররাজনীতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ—সর্বত্র ছিল তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। শেখ কামালের অকালমৃত্যুতে দেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তো বটেই, রাজনীতিতেও এক অসামান্য ও অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে আধুনিক ফুটবলের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন শেখ কামাল।
তিনি
প্রথম বিদেশি ফুটবল কোচ এনেছিলেন দেশে।
ক্রিকেটও খুব প্রিয় ছিল
তার, ভালো ফাস্ট বোলিং
করতেন। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের
হয়ে শেখ কামাল প্রথম
বিভাগের লীগে খেলেছেন সে
সময়। তার নেতৃত্বে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্কেটবল দল ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদত
বরণের সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান
বিভাগের এমএ শেষ পর্বের
পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
শহিদ
শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ
ও তার অঙ্গসংগঠন-গুলোসহ
বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক
সংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি
গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী
সংগঠন এদিন সকালে ধানমন্ডির
আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহিদ শেখ কামালের
প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও বনানী কবরস্থানে
তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শহিদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।