সাদনান তাজ আপন,স্টাফ রিপোর্টার | আপডেট: মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
দেশের
কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কনডেম সেলে থাকা সব বন্দিদের তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষকে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে এ তথ্য আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইদিন
এ সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
এ
সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম
ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে
রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে
ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর
আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে
কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। চট্টগ্রাম কারাগারের
কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে শিশির মনির এ
রিট দায়ের করেন।
রিটকারী
কারাবন্দিরা হলেন— চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা
সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা
কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে
বিচারাধীন রয়েছে।
রিটে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স,চট্টগ্রাম,
সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী করা হয়।
রিট
আবেদনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত
ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রুলটি বিবেচনাধীন
থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়।
পাশাপশি দেশের সকল জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সম্পর্কে (সুযোগ ও সুবিধা)
কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিট
আবেদনে বলা হয়, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার
আইনগত কোনও বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম
করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট
বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট
বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে
সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করতে পারেন।
তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত
সুযোগ রয়েছে।
সর্বোপরি,
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে
পারেন। রাষ্ট্রপতি ক্ষমার ওই আবেদন না মঞ্জুর
করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে
মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয় বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।