ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

ভয়ভীতি দেখাতেই সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১

ভয়ভীতি দেখাতেই সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব

ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনাকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা। এভাবে ব্যাংক হিসাব তলব করে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালানো হয়েছে বলেও মনে করেছেন তাঁরা।

 

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ১১ জন সাংবাদিক নেতা উপস্থিত হয়ে এ দাবি করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে ১১ জন সাংবাদিকের পক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, সারা দেশের সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নাম ও প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে ঢালাওভাবে তাঁদের ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় সারা দেশের সাংবাদিকদের মনে গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।

 

দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব এভাবে তলব করা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কেননা এর আগে কোনো দিন কোনো সময়ে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাওভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক বলে আমরা মনে করি।

 

মশিউর বলেন, সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করে সাংবাদিকদের সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কেন, কি কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এতে সারা দেশের সাংবাদিকদের মনে নানা ধরনের আশঙ্কারও সৃষ্টি করেছে। অনেকে বিএফআইইউর এই পদক্ষেপকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছে।

 

আপনারাও বিএফআইইউর এই পদক্ষেপকে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলে মনে করেন কি-না, এ প্রশ্নে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, অবশ্যই, আমরাও তাই মনে করছি।

 

সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলা হয়। মশিউর বলেন, বিএফআইইউর চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রতিকার দাবি করছি। কেননা এতে করে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালানো হয়েছে, যা কারও কাম্য নয়।

 

আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আমাদের নেতাদের ব্যাংক হিসাবে যদি কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন কিংবা কোনো ধরনের মানি লন্ডারিং কিংবা জঙ্গি অর্থায়নের তথ্যউপাত্ত পাওয়া যায় তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আর যদি তা না হয় তবে সেটাও যেন যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। সাংবাদিকদের সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকিতে আমরা অতীতে যেমন পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হব না।

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের নামে কয়টি ব্যাংক হিসেব রয়েছে তা শুধু প্রকাশ করলেই হবে না, সেসব অ্যাকাউন্টে কি রয়েছে সেই তথ্যও প্রকাশ করতে হবে। যখন কোনো প্রতিষ্ঠানই বলতে পারছে কেন এই চিঠি দেওয়া হয়েছে, তখন প্রশ্ন আসে গভীর ষড়যন্ত্র কি-না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এর আগে সাংবাদিক নেতাদের এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি। আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, সাংবাদিকদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। সাংবাদিকদের আর যেন প্রশ্নবিদ্ধ করা না হয়।

 

সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে মোল্লা জালাল। তিনি বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা আগেও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি। এই বিষয়টি সকলের, সকলকে সম্মিলিতভাবে প্রতিকার করতে হবে।

 

এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএনপি সমর্থিত) আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএনপি সমর্থিত) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খানের ব্যাংক হিসাব তলব করে।