ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
গ্রাহকের দায়
মেটাতে
বিভিন্ন
অজুহাতে
সময়
বৃদ্ধি
ইভ্যালির
একটি
অপকৌশল
মাত্র।
সবশেষ
গ্রাহকের
দায়
মেটাতে
ব্যর্থ
হলে
নিজেকে
'দেউলিয়া
ঘোষণার'
পরিকল্পনা
করেছিলেন
প্রতিষ্ঠানটির
প্রধান
নির্বাহী
কর্মকর্তা
(সিইও)
মো.
রাসেল।
শুক্রবার
(১৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ
কথা জানান।
সংবাদ
সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন,
ইভ্যালি ছাড়াও রাসেলের মালিকানাধীন আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক
প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এর মধ্যে ই-ফুড, ই-খাতা,
ই-বাজার ইত্যাদি। ইভ্যালির ব্যবসা শুরু হয়েছে যত্সামান্য
নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে। তাঁর ব্যবসায়িক কৌশল
ছিল তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন
বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ
তুলে নেওয়া। তিনি বিশাল অফার,
ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের অফার
দিয়ে জনগণকে প্রলুব্ধ করতেন, যাতে দ্রুততম সময়ে
ক্রেতা বৃদ্ধি সম্ভব হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে
জানা যায়, ইভ্যালির গ্রাহকসংখ্যা
৪৪ লাখেরও অধিক। তিনি বিভিন্ন লোভনীয়
অফারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ
গ্রাহক সৃষ্টি করেছেন।
কোম্পানির
দায় ও দেনা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে উল্লেখ
করে কমান্ডার মঈন জানান, একটি
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৮
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেনা প্রায় ৪০৩
কোটি টাকা; চলতি সম্পদ ছিল
৬৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন
পণ্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ
থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৪ কোটি টাকা
এবং বিভিন্ন গ্রাহক ও কোম্পানির কাছে
বকেয়া প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।
বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে প্রকাশিত বিপুল পরিমাণ এই দায়ের বিষয়ে
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা কোনো সদুত্তর দিতে
পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়,
প্রতিষ্ঠানটির আরও দায়দেনা রয়েছে।
তাঁরা জানান, দায় ও দেনার
পরিমাণ ১ হাজার কোটি
টাকার বেশি।
কোম্পানিতে শুরুর দিকে প্রায় ২ হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও ১ হাজার ৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ ছিল, যা ব্যবসায়িক অবনতিতে বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ জন ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে। শুরুতে মোট মাসিক বেতন বাবদ দেওয়া হতো প্রায় ৫ কোটি টাকা, যা বর্তমানে দেড় কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে
বক্তব্য
রাখেন
র্যাবের
লিগ্যাল
অ্যান্ড
মিডিয়া
উইংয়ের
পরিচালক।
ছবি:
ফ্রিডম
বাংলা নিউজ
জিজ্ঞাসাবাদে
জানা গেছে, রাসেল ও তাঁর স্ত্রী
পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক ৫ লাখ টাকা
করে বেতন নিতেন। তাঁরা
কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামি গাড়ি
(রেঞ্জ রোভার ও অডি) ব্যবহার
করেন। এ ছাড়া কোম্পানির
প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি
যানবাহন রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সাভারে গ্রেপ্তারকৃত রাসেলের কয়েক কোটি টাকা
মূল্যের জায়গা-জমিসহ অন্যান্য সম্পদ রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা
জানান, ইভ্যালির বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা
রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি
গেটওয়েতে ৩০ থেকে ৩৫
কোটি গ্রাহকের টাকা আটকে আছে।
ইভ্যালির
মূল হোতা গ্রেপ্তারকৃত রাসেল
প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং তাঁর
স্ত্রী গ্রেপ্তারকৃত শামীমা নাসরিন (চেয়ারম্যান) তাঁর অন্যতম সহযোগী।
রাসেল ২০০৭ সালে একটি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন
করেন এবং ২০১৩ সালে
এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১১
পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে
শিক্ষকতা করেন রাসেল। ২০১১
সালে তিনি ব্যাংকিং সেক্টরে
চাকরি শুরু করেন। পরে
২০১৭ সালে ব্যাংকের চাকরি
ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু
করেন। তিনি প্রায় এক
বছর শিশুদের ব্যবহার্য একটি আইটেম নিয়ে
ব্যবসা করেন। ২০১৮ সালে পূর্বের
ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ
দিয়ে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের
ডিসেম্বর মাসে ইভ্যালির কার্যক্রম
শুরু হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে
জানা যায়, ইভ্যালি পরিকল্পিতভাবে
একটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক গঠনতম্ভ। একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে
স্বেচ্ছাচারিতা করার অবকাশ রয়েছে।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি
রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানের
দায় বৃদ্ধি হতে হতে বর্তমানে
প্রায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গ্রাহকদের
কাছে দায় নিয়ে বিচলিত
প্রতিষ্ঠানটি। ইভ্যালির নেতিবাচক ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটিজি উন্মোচিত হওয়ায় অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান
ও অর্থ ট্রানজেকশন গেটওয়ে
ইভ্যালি থেকে সরে এসেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত এই
সংকট থেকেে উত্তরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের কোনো কথা তাঁরা
বলতে পারেননি।
এর
আগে প্রতারণার অভিযোগে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে
ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মো. আরিফ
বাকের নামে একজন গ্রাহক।
তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। মামলায় ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেলকে
এক নম্বর আসামি ও চেয়ারম্যান শামীমাকে
দুই নম্বর আসামি করা হয়। মামলায়
আরও কয়েকজন ‘অজ্ঞাতনামাকে’ আসামি করা হয়েছে।
মামলার
এজাহারে আরিফ বাকের উল্লেখ
করেছেন, ইভ্যালির অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৩ লাখ ১০
হাজার ৫৯৭ টাকার পণ্য
অর্ডার করেছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা পাননি। নিরুপায়
হয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে
তিনি মামলা করেছেন।
গতকাল
বৃহস্পতিবার ইভ্যালি ডটকম লিমিটেডের প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও তাঁর স্ত্রী
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।