ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

কাঙ্খিত মূল্য না পাওযায় আগ্রহ হারাচ্ছে পেয়ারা চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, আগস্ট ৪, ২০২১

কাঙ্খিত মূল্য না পাওযায় আগ্রহ হারাচ্ছে পেয়ারা চাষিরা

বাংলার আপেলখ্যাত পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি নেই। গেল বছরের তুলনায় এবছর কুড়িয়ানা পেয়ারার বাম্পার ফলন হলেও লকডাউনের কারণে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। গত কয়েকদিনে মন প্রতি পেয়ারা ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে চাষিরা লাভ বাদ দিয়ে পেয়ারা চাষের খরচ পুষিয়ে উঠতে চান। চাষিদের অনেকেই পেয়ারা চাষ বাদ দিয়ে সেই জমিতে অন্য ফসলাদি বুনন করছে।

আটঘর কুড়িয়ানা গ্রামের পেয়ারা চাষিরা বলেন, পেয়ারায় এখন আর লাভের মুখ দেখিনা। নতুন করে পেয়ারা চারা কেউ রোপনও করে না। এ ব্যাপারে পেয়ারা চাষি মিলন বেপারি বলেন, তার তিন বিঘা জমিতে পেয়ারা রয়েছে। ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে। তবে করোনায় লকডাউনে ব্যাপারীরা আসছে না। তাতে এবছর শুরুতে পেয়ারার যে দাম চলছে তাতে কেবল দুচোখে বিষন্নতার ছাপ বয়ে আসছে। গত কয়েকদিনে কিছু বেপারীরা আসছে, তাই পেয়ারার দাম একটু ভাল পাচ্ছি। তবে এ দাম কয়েকদিন পরে আর থাকবেনা। তখন একমন পেয়ারা বিক্রি হবে ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। সে সময়ে পেয়ারা পরিণত হয় গো খাদ্য হিসেবে।

আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার জানান, এখানে পেয়ারা চাষিদের নানান সমস্যা রয়েছে। এখানকার পেয়ারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে নেওয়ার জন্য বড় ট্রাকগুলো এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনা। কিন্তু পাশ্ববর্তী ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলিতে অনেক পূর্বে থেকে ট্রাক ডুকতে পারে। সে কারণে এখানকার পেয়ারা চাষিরা কষ্টকরে ভিমরুলিতে গিয়ে পেয়ারা বিক্রি করেন। যে কারণে ওখানে পেয়ারা বেপারিরা বেশি আসে বিদায় ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা হাট অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়নের আদমকাঠি থেকে রাজাপুর হয়ে ভিমরুলি যাওয়ার সহজ খালটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন। খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায়, ভাটার সময় খাল দিয়ে ছোট ছোট নৌকাও চলাচল করতে পারেনা। এই খালটি খনন করা অতীব জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া পেয়ারা দ্রুত পচনশীল একটি ফল। এটি সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার পেয়ারা পঁচে যায়। এ কারণে চাষিরা বিশাল লোকসানের মুখে থাকে বলে জানান চেয়ারম্যান।

ইউনিয়নের আদমকাঠি গ্রামের ৫বিঘা জমির পেয়ারা বাগানের মালিক শংকর প্রসাদ হালদার বলেন, ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে। তবে পেয়ারায় এখন আর দাম মেলে না। শুরুতে এক মন পেয়ারা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও শ্রাবণের ভরা মৌসুমে বাগানের খরচ ওঠানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাগানের পেয়ারা তুলতে একজন কৃষানকে ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। সেই লোক বাগান থেকে যে পরিমান পেয়ারা তুলেন তা ৮০০ টাকাও বিক্রি হয় না। তিনি বলেন, এখন বাগান কেটে অনেকেই সেখানে আমড়া, কাগজি লেবু ও নানান জাতের সবজি চাষ শুরু করে দিয়েছেন। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৬/৭ কিলোমিটার দূরে দেশের সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগান আটঘর-কুড়িয়ানায়। আটঘর কুড়িয়ানা হয়ে আদমকাঠি, ধলহার, আন্দাকুল, খায়েরকাঠি, ভদ্রাঙ্ক গ্রামের যে কোন এলাকায় প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে সারি সারি পেয়ারার বাগান। পেয়ারা মৌসুমে এসব এলাকার কোন জায়গায় খালের ধারে, রাস্তার পাড়ে বসে পেয়ারার হাট। আর ব্যবসায়িরা ওইসব হাটে এসে পেয়য়া কিনে ঝুড়ি/ক্যারেট বোঝাই করে ট্রাক, গাড়ী, ট্রলার যোগে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

চাষিরা জানান, সারি সারি পেয়ারা বাগানের কোনটি ২শ বছরের পুরানো, আবার কোনো কোনোটি তুলনামূলকভাবে ৫/৬ বছরের নতুন গাছ। তারা জানান, আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারার কদর দেশ জুড়ে। একসময় এই কদরের কারণেই ইউনিয়ের প্রায় অধিকাংশ গ্রামই পেয়ারার চাষে জড়িয়ে আছে। তবে দিন দিন পেয়ারার দাম কমে যাওয়ায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়েছে পেয়ারা চাষে।

ঢাকা থেকে আসা পেয়ারা ব্যবসায়ি মো. নূরে আলম জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে এই কাঁচামালের ব্যবসায় জড়িত। কয়েক বছর ধরে পেয়ারা ব্যবসায় তিনি লাভের মুখ দেখেন না বললেই চলে। এ বছর লকডাউনে পেয়ারা ব্যবসায় লোকসানে আছেন। তিনি জানান, এক ক্যারেট (২০ কেজি) পেয়ারা ২শ টাকায় কিনে গাড়ি করে ঢাকায় পাঠাতে তার প্রতি ক্যারেটে খরচ পড়ে ১শ টাকা। সব মিলিয়ে তিনি এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার টাজা লোকসানে আছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ জানান, উপজেলার ২২টি গ্রামের কয়েক সহস্ররাধিক লোক পেয়ারা চাষে জড়িত। এখানে ৬৫৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়ে থাকে। কুড়িয়ানার সুমিষ্ট পেয়ারা চাষের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ জানতে এই কর্মকর্তা বলেন, চাষিদের কাছ থেকে ব্যবসায়িরা পেয়ারা কিনে ঢাকাগামি লঞ্চ অথবা গাড়ি করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পাঠান। সেই পেয়ারা ঢাকায় পৌঁছাতে একদিন সময় লেগে যায়। এতে দেশি পেয়ারার সরস ভাবটা একদিনেই নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে ভোক্তাদের কাছে পেয়ারার চাহিদাটাও তখন কমে যায়। ফলস্বরূপ চাষিরা পেয়ারার ন্যায্য দামটা না পাওয়ায় তারা ক্রমেই পেয়ারা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলেই এখানকার পেয়ারাসহ অন্যান্য কাঁচামাল দিনের মধ্য কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকায় যাবে। তখন পেয়ারার দামটাও ভাল পাওয়া যাবে বলে আশা করি।