ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

চিকিৎসা সেবায় বদলে গেছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মাদারীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুলাই ৭, ২০২২

চিকিৎসা সেবায় বদলে গেছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
মানব সেবার শপথ নিয়েই চিকিৎসকদের চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করতে হয়। চিকিৎসকরা মানুষের জীবন রক্ষায় কাজ করেন। রোগীর পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হয় চিকিৎসকদের। গ্রামীণ জনপদে উন্নত সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত মাদারীপুর শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

শিবচরের বেশির ভাগ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সার্বিক অবকাঠামোর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মান ব্যপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে হাসাপাতালের সেবা নিয়েও এলাকার মানুষ বেশ সন্তোষ্ট।

জানা যায়, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শশাঙ্ক ঘোষ এর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও রোগীরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন। পঞ্চাশ (৫০) শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ চিকিৎসক মোট ৩৯ জন, সেবিকা ৩২ জন নিয়ে রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরী ও বহির্বিভাগে। উপজেলায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রতিদিন কমবেশী প্রায় ৪০০ জন রোগীর সেবা নিয়ে থাকে।

প্রতিদিন জরুরী বিভাগে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকে। প্রতিমাসে কমবেশী ১৫ থেকে ২০ জন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারী করা হয়। তাছাড়াও জ্ঞাত যে জরুরী প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে ডেলিভারীর ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

এছাড়াও অতিসম্প্রতি সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের শুরু করেছেন। প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর বন্ধ থাকা জেনারেল সার্জারি অপারেশন নিয়মিত হচ্ছে। এখানে এরমধ্যে এপেন্ডিসাইটিস হার্নিয়া ফিশার ফিস্টুলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অপারেশন হচ্ছে বলেও জানা যায়। হাসপাতলে আগে গেলে ঔষধ পাওয়া যেত না এখন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ঔষধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এবং ভর্তিকৃত রোগীদের ঔষধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে

গত ২০২০ সালের ০১ জানুয়ারি তিনি যোগদানের পর পর এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শশাঙ্ক ঘোষ । তিনি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের রোগীর খাবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সুবিধা-অসুবিধাসহ সার্বিক বিষয়ে নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়াও রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালের কর্মব্যস্থ সময় পার করতে দেখা যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কিভাবে আরো সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায় এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়,  করোনাকালে এখানে মোট  ৫৫ হাজার ৬শ ৩২ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে করোনা আক্রান্ত ১ হাজার ৫শ ৫৬ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০ জন রোগী মারা যায়। নিয়মিত করোনা টিকা দান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা প্রধান করা হয়েছে। ২ লাখ ৪২ হাজার জন কে প্রথম ডোজ ও প্রায় ২ লাখ জনকে দ্বিতীয় ডোজ এবং ৫০ হাজার জনকে বুস্টার ডোজ টিকা প্রধান করা হয়েছে।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা.শশাঙ্ক ঘোষ যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া রাত অবধি এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে কর্মব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে। আসলে চিকিৎসকদের একটু দরদি স্পর্শ, একটু সহানুভূতি, একটু হাসিমাখা মুখের কথায় জটিল ও কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকেও আশাবাদী করে তোলে, রোগযন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা কয়েজন রোগী  অভিযোগ করে বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা সব সময় হাসপাতালের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে। অনেকে আবার চিকিৎসকের চেম্বারের মধ্যে অবস্থান করে। চিকিৎসকরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিলেই এসব দালাল পাগল হয়ে যায় তাদের প্রতিষ্ঠানে নেয়ার জন্য। এতে রোগী ও স্বজনদের প্রতিদিনই নাজেহাল হতে হয়।

তবে সরকারি এই হাসপাতালটিতে চুরি, ছিনতাই, দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমে এসেছে বলে সাধারণ রোগীদের আত্মীয়স্বজনরা মনে করছেন।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.শশাঙ্ক ঘোষ বলেন, ‘মুজিব বর্ষে স্বাস্থ্য খাত, এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ’। এই স্লোগানের মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা করি কীভাবে এই হাসপাতালের পরিবর্তন আনা যায়। পরিকল্পনার অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী স্যারের সহযোগিতায় সকল চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবার মান বৃদ্ধিসহ হাসপাতালের উন্নয়ন এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে।

দালালদের দৌরাত্ম্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ শুনেছি। আমি চাই আমাদের হাসপাতাল দালালমুক্ত থাকুক। অসহায় দরিদ্র রোগীরা বিনা খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাক। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। হাসপাতাল এলাকা দালালমুক্ত করতে আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করেছি। আমি শত ভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছি দালাল মুক্ত করার। এর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা দরকার।