নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
মাহবুব-উল আলম হানিফ
জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
ছোট কন্যা শেখ রেহানা যিনি
‘ছোট আপা’ বলে দলের
নেতা-কর্মীদের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশের
রাজনীতিতে যে পরিবারের ভূমিকা
সবচেয়ে বেশি সেই পরিবারের
একজন শেখ রেহানা। বাংলা
ও বাঙালির প্রয়োজনে তিনি নির্মোহ একজন
মানুষ। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের
সন্তান হয়েও কখনো সরাসরি
রাজনীতিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে
গেছেন। জনহিতৈষী কাজে সব সময়ই
ভূমিকা রেখেছেন শেখ রেহানা। ধানমন্ডিতে
তাঁর নামে বরাদ্দ বাড়িটিও
দিয়েছেন দেশের কাজে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে বিশ্বমানবতার কাছে
প্রথম আবেদন রাখা হয় ১৯৭৯
সালের ১০ মে। বঙ্গবন্ধুর
জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষ
থেকে বিশ্বমানবতার কাছে এই আর্জি
পেশ করেছিলেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্থপতি,
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সম্মেলনের
প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে
তাঁর পাঠানো বাণী পাঠ করেন
শেখ রেহানা। তাঁর পক্ষে বক্তব্য
রাখেন তিনি। এটাই ছিল কোনো
রাজনৈতিক সমাবেশে শেখ রেহানার প্রথম
বক্তব্য রাখা। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের মাধ্যমে
বিশ্ববাসীর কাছে তিনিই সর্বপ্রথম
‘৭৫ এর কলঙ্কজনক ও
অমানবিক হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও
জাতীয় চার নেতার হত্যার
বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি
করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। পঁচাত্তরের পৈশাচিক হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে
শেখ রেহানার আবেগঘন বক্তব্য সে অনুষ্ঠানে এক
হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। হলভর্তি প্রবাসী বাঙালি নারী-পুরুষ এবং
বিদেশি রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্ট সদস্য ও সাংবাদিকরা পিনপতন
নীরবতায় তাঁর বক্তব্য শোনেন।
১৯৮০
সালের ১৬ আগস্ট পূর্ব
লন্ডনের ইয়র্ক হলে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুসহ
১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে শোকসভার মাধ্যমে শেখ হাসিনার পুনরায়
অভিষেক হয় সক্রিয় রাজনীতিতে।
ওই দিন বঙ্গবন্ধু হত্যা
তদন্তে আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন স্যার টমাস
উইলিয়াম এমপি কিউসি। সদস্য
সচিব হন সলিসিটর অব্রে
রোজ। এ ছাড়া কমিশনের
অন্যান্য সদস্য ছিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সন ম্যাকব্রাইট, লেবার
পার্টির তৎকালীন আইনবিষয়ক মুখপাত্র জেফরি টমাস কিইউসি এমপি।
সর্ব ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত
কমিশন গঠনে শেখ রেহানা
অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও তিনি
আড়ালেই থেকে যান এবং
এখনো তিনি আড়ালে থেকেই
শেখ হাসিনার পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রেখে চলেছেন।
একজন
সাধারণের মতোই জীবনযাপন করেন
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ
রেহানা। যেন একদম সাদাসিধে
আটপৌরে বাঙালি নারী। চরিত্রে কখনো আদিখ্যেতা কিংবা
অহংকার মনোবৃত্তি পোষণ করেননি। দেশের
জন্য কাজ করে যাচ্ছেন
নীরবে নিভৃতে। সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জীবনের
প্রতিটি পর্যায়ে। সুযোগ্য মায়ের যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। মা বেগম ফজিলাতুন
নেছা মুজিব পর্দার অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন
সাহস ও অনুপ্রেরণা। যার
অনুপ্রেরণায় শেখ মুজিব হতে
পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর এখন পর্দার
অন্তরালে বড় বোন বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে
থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন যিনি;
তিনি হলেন শেখ রেহানা,
জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা। শেখ রেহানার ইতিবাচক
ভূমিকার কারণেই শান্তির আলোকবর্তিকা হাতে বিশ্বময় শেখ
হাসিনা।
শেখ
রেহানার জীবনালেখ্য নিয়ে হয়তো বেশি
কিছু জানা যায়নি, তবে
জীবনের গভীরতা অনুধাবন করা যায় ব্যাপকভাবে।
কারণ, তাঁর সাদামাটা জীবনচরিত
এবং অতিথিপরায়ণতা সবার নজর কাড়তে
সক্ষম হয়েছে।
আওয়ামী
লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়া আলোচনায়
বলেন যে, শেখ রেহানা
ছাড়া তিনি অচল, শেখ
রেহানা ছাড়া তিনি পরিপূর্ণ
নন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন
তিনি। তবে আওয়ামী লীগের
বিভিন্ন দুঃসময়ে, বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি যেন আশা-ভরসার স্থান। বিশেষ করে শেখ রেহানার
কথা উচ্চারণ হলে ২০০৭-এর
ওয়ান-ইলেভেনের কথা দৃশ্যপটে সামনে
চলে আসে। সে সময়
আওয়ামী লীগকে বিভক্তির হাত থেকে বাঁচাতে,
শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক
মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক
ধারণা দিতে শেখ রেহানাই
মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি
প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে
এসে পাশে থেকে জননেত্রী
শেখ হাসিনাকে সাহস ও পরামর্শ
দিয়ে সহায়তা করেছেন।
জাতির
পিতার কন্যা তিনি অথচ জীবনটা
তাঁর জন্য সহজ হয়নি।
তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সংগ্রাম করে জীবনে জয়ী
হওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের
পর দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন তবুও
হতাশ হননি। রাজনীতি সচেতন শেখ রেহানা সর্বদা
আড়াল থেকেই দিচ্ছেন তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার
পরিচয়।
আজ
তাঁর জন্মদিন।
শুভ
জন্মদিন ছোট আপা।
লেখক
: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ