ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

বন্ধুর প্রেমিকাকে তুলে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুন ১৬, ২০২২

বন্ধুর প্রেমিকাকে তুলে আনতে গিয়ে গণপিটুনিতে যুবক নিহত
মাগুরার শ্রীপুর বিয়ে ঠিক হওয়া বন্ধুর প্রেমিকাকে তুলে আনতে গিয়ে স্থানীয় জনতার মারধরের শিকার হয়ে রাসেল (২২) নামে এক যুবক মারা গেছেন। এ সময় মঞ্জুরুল জোয়াদ্দার (২২) ও রাজু আহমেদ (২৩) নামে আরও দুজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ জুন) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে মঞ্জরুল জোয়াদ্দার নামে এক যুবক তার বন্ধু রাসেল, রাজুসহ ৫ থেকে ৬ জন মিলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীকে জোর করে তুলে আনার চেষ্টা করে। এ সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকারে গ্রামের লোকজন এসে মঞ্জুরুল, রাজু ও রাসেলকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয়। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এর মধ্যে রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে প্রথমে মাগুরা তারপর ফরিদপুর ও অবস্থার অরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। বুধবার (১৫ জুন) ভোরে ঢাকায় রাসেলের মৃত্যু হয়। আহত মঞ্জরুল জোয়াদ্দার ও তার বন্ধু রাজু আহমেদ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ওই স্কুলছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ে একটি বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। সে লেখাপড়াও মোটামুটি ভালো। ৬ মাস আগে থেকে ৩ কিলো দূরের গ্রামের মঞ্জুরুল নামে এক বখেটে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। ফলে আজ ৬ মাস মেয়েটি স্কুলে যেতে পারে না। বাড়ির সামনেও প্রায় ৩ থেকে ৪টি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই বখাটেরা দাঁড়িয়ে থাকে। এলাকায় ওরা খুব ক্ষমতাবান লোক ওদের কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। তাই আমি মেয়ের বিয়ে ঠিক করতে বাধ্য হয়েছি। বুধবার মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু গতকাল (মঙ্গলবার) ওই ছেলেরা আমার বাড়িতে এসে মেয়েকে জোর করে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল।

মেয়ের দাদি বলেন, ওই ছেলেদের অনেক বুঝাইছিলাম যে কাল ওর (স্কুলছাত্রী) বিয়ে, তোমারা চলে যাও। কিন্তু ওরা কোনো কথাই শোনেনি। আমার ঘর থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমার নাতনিকে জামা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, হঠাৎ মেয়েটির বাড়ি থেকে চিৎকারে আমরা গিয়ে দেখি জোর করে মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তখন ওদেরকে ধরে মারধর দিয়ে ওদের গ্রামের মাতবরদের হাতে তুলে দেই। পরে শুনলাম ওর মধ্যে একটি ছেলে মারা গেছে।

তিনি আরও বলেন, এই ছেলেগুলো পাশের গ্রামের কিন্তু ওদের কাজই এলাকার বিভিন্ন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা। কিন্তু এরা প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না।

এদিকে নিহত রাসেলের পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করে, রাসেলের বন্ধু মঞ্জুরুলের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটিই মঞ্জুরুলকে খবর দেয় পরিবার থেকে তার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এ খবর পেয়ে মঞ্জুরুল তার বন্ধু রাসেল ও রাজুসহ কয়েকজন মিলে বিয়ের কথা বলতে মেয়েটির বাড়ির বাড়ির সামনে গেলে হঠাৎ মেয়ের দাদার নির্দেশে লাঠিসোটা, দা দিয়ে এদের ওপর হামলা চালায়।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার জানান, এটি প্রেম গঠিত ব্যাপার। তবে ছেলেগুলো মেয়ের বাড়িতে গিয়ে অন্ধকারে জোর করে তুলে নেয়ার চেষ্টা করছিল। এ ব্যাপারে এথনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। নতুন করে দুর্ঘটনা এড়াতে দুই গ্রামেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সবাই কাজ করছে।