ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখির বাসা

মাদারীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, মে ২৭, ২০২২

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখির বাসা
কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। 'বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে....'। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী এ ছড়ায় বাবুই পাখির প্রধান আস্তানা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ যেমন এখন আর দেখা যায় না, তেমনি দেখা মেলে না ছড়ার নায়ক বাবুই পাখিও।

শিবচর উপজেলার গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা নদীর পারে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে আপন ঘর নির্মাণে ব্যস্ত শিল্পমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখন এসব দৃশ্য শুধুই কল্পনার বিষয়।পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা অনেকটা বিলীন হতে চলেছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা।

একসময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। এরমধ্যে অনেক বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না। শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেন চোখে ভেসে আসে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একসময় উপজেলার যেসব গ্রামে সারিসারি তালগাছ ছিল, সেইসব তালগাছের পাতায় পাতায় মোড়ানো থাকতো বাবুই পাখির বাসা। পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রামাঞ্চল মুখরিত থাকতো। সেইসব গ্রামে এখন আর তালগাছও নেই, বাবুই পাখির বাসাও নেই। আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করতো। তখন কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি তালগাছ চোখে পড়ে। এখন আর মুখরিত হয়না কিচিরমিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।

বাবুই পাখির বাসার ভিতর আধুনিক যুগের মত লাইটের ব্যবস্থা আছে। বাসার ভেতর একটু গোবর রাখা হয়, তার ভেতর জোনাকি পোকার মাথাটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়।ফলে জোনাকির আলোতে বাসা আলোকিত হয়ে উঠে।

বাহাদুরপপুর এলাকার কৃষক আ: জলিল ঢালী বলেন, 'বাবুই পাখির বিচরণ ধরে রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।'

ঢালীকান্দি বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, 'ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু'পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র কয়েকটি তালগাছে তারা বাসা বেঁধেছে।

সাংবাদিক অপূর্ব জয় বলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলে প্রচুর তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছ দেখা যেতো। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের শৈল্পিক বাসা তৈরি মানুষকে আনন্দিত করতো। কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে গ্রামে। জলাশয়সহ কৃষি জমি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। গাছপালা কেটে বসতির জন্যে অট্টালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাই এখন আর আগের মতো গ্রামাঞ্চলের রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে সেই তালগাছ, খেজুর গাছ যেমন দেখা যায় না তেমনি দেখা মিলে না শৈল্পিক বাবুই পাখিরও। গ্রামের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে শৈল্পিক বাবুই পাখিও।

তিনি আরো বলেন, এখন এসব যেন বইয়ের ছড়া আর দাদুর কাছে শোনা গল্প। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বড় বড় তাল, খেঁজুর, নারিকেল গাছ না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখি। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন রক্ষা করার জন্যে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শিবচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।'