ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য, আটক- ২

আমান উল্লাহ কবির, টেকনাফ প্রতিনিধি | আপডেট: বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৪

মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য, আটক- ২
মিয়ানমারের রাখাইনের সহিংসতার ফলে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এমন খবর সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাচার করছে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য। কাঁচা তরকারিসহ ভোগ্যপন্য।

এভাবে পাচারকালে কক্সবাজারের টেকনাফের সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকা থেকে পাচার চক্রের দুইজন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-১৫। এসময় পাচারকালে ৪ হাজার ৪৭০ লিটার ভোজ্য তেল সয়াবিন, বিভিন্ন প্রকারের ১লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৫০ পিস ঔষধ ও ৫'শত কেজি ময়দা উদ্ধার করা হয়েছে। 

আটককৃত পাচারকারীরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড হাতিয়ার ঘোনা এলাকার আবুল বশরের ছেলে আব্দুল মন্নান (২৪) ও একই এলাকার মৃত হাছন আলীর ছেলে আলী হোসেন (৪৫)।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল' এন্ড মিডিয়া) মোঃ আবু সালাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান,সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে কতিপয় পাচারকারী ভোজ্য তেল সয়াবিন'সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকায় জনৈক আবুল বাশার হাজির মুরগির খামার সংলগ্ন ভিটা এলাকায় অবস্থান করে। খবর পেয়ে টেকনাফ ক্যাম্পের র‌্যাব টহলদল উক্ত এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান চালায়। এসময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে দুইজন পাচারকারীকে আটক করা হয়। 

তারা পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ভোজ্যতেল সয়াবিন, ঔষধ এবং ময়দা মজুদ রাখে মর্মে স্বীকার করেছে। পরে ১টি জীপ গাড়িসহ ৮৯৫টি বোতলে ৪ হাজার ৪৭০ লিটার ভোজ্য তেল সয়াবিন, বিভিন্ন প্রকারের ১লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৫০ পিস ঔষধ ও ১০টি বস্তায় মোট ৫শত কেজি ময়দা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।

জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়,তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এই চোরাচালানের সাথে জড়িত। তারা পরস্পর-পরস্পরের সহযোগীতায় দেশের বিভিন্ন কোম্পানী থেকে পাইকারি দামে ভোজ্য তৈল, ঔষধ, ময়দা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে নিজেদের হেফাজতে মজুদ করতো। পরবর্তীতে আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে অবৈধভাবে চোরাইপথে এ দেশ হতে মিয়ানমারে পাচার করতো বলে আটককৃতরা জানায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশে যুদ্ধাবস্থার কারণে দেশটিতে তৈল, ঔষধ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক ঘাটতি এবং দ্রব্যমূল্যের প্রচন্ড উর্ধ্বগতি দেখা দেয়। এই উদ্ভুত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তৈলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বাংলাদেশ থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে উচ্চ দামে কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে আসছিল। বিনিময়ে নগদ টাকার পাশাপাশি তারা ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে নিয়ে আসতো বলে জানায়। 

উল্লেখ্য,সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার জেলার সমুদ্রের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও  পাচারকারী ভোজ্যতেল সয়াবিন'সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, জ্বালানী তৈল ও ডিজেল অবৈধভাবে চোরাচাইপথে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে পাচার করছে। এতে করে একদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সাথে দেশীয় উপরোল্লিখিত খাদ্যদ্রব্য, অকটেন, ডিজেল ইত্যাদি দেশ থেকে অন্যদেশে পাচার হওয়ার কারণে দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। 

চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশে পাচাররোধে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে সর্বমোট ৯ জন পাচারকারীকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। একই সাথে তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় সর্বমোট ৫ হাজার ৩৮৫ লিটার অকটেন, ৪০ কেজি পেঁয়াজ, ৩১ কেজি রসুন, ৩৬ কেজি আদা উদ্ধার এবং পরিবহন কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ, নগদ ১৮ হাজার ১০০  টাকা,৩টি বাটন ও ৪টি স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়।