ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, জুন ২, ২০২৪ |

EN

দেশের সবচেয়ে বড় দীপাবলি উৎসব বরিশালে, ড্রোন ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ

আল মামুন, বরিশাল প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৪, ২০২১

দেশের সবচেয়ে বড় দীপাবলি উৎসব বরিশালে, ড্রোন ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ বরিশাল মহাশ্মশানে অনুষ্ঠিত শুরু হয়েছে দীপাবলী উৎসব হবে। প্রায় দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে এখানে চলে আসছে এই উৎসব। এবারেও উৎসবকে ঘিরে সকল আয়োজন সম্পন্ন করে শ্মশান রক্ষা কমিটি।

 

বুধবার বিকাল ৫টায় ভূত চতুর্দশী তিথিতে শুরু হওয়া দীপাবলী উৎসব শেষ হয় বৃহস্পতিবার সকালে। তবে উৎসবের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় বুধবার রাতেই।

 

এদিকে দীপাবলী উৎসবকে ঘিরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মঙ্গলবার থেকেই মহাশ্মশান এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি শ্মশানে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সাথে এবারই প্রথম ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। আর তাই মঙ্গলবার সকালে কাউনিয়ার আদি মহাশ্মশান পরিদর্শন করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূইয়া।

 

জানা গেছে, ভূত চতুর্দশী তিথিতে হয়ে থাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের শ্মশান দীপাবলী উৎসব। উৎসবের দিনে মোমবাতি প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে শ্মশান। এদিন মৃত স্বজনদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন তাদের স্বজনরা। এজন্য বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই শ্মশানে মৃত স্বজনদের সমাধিতে রং করা, মাটির সমাধি সংস্কার এবং ধোয়া মোছায় ব্যস্ত সময় পার করেন অনেকে।

 

বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বলেন, ২শ বছরের অধিক সময় ধরে চলা এই মহাশ্মশানে দীপাবলী উৎসব এবারও আড়ম্বর পরিবেশে পালিত হয়েছে। শ্মশানে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত, ব্রিটিশ বিরোধী নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমা সমাধিসহ কাঁচা পাকা মিলিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার সমাধি রয়েছে। যার মধ্যে ৯শ সমাধি রয়েছে, যাদের স্বজনরা থাকেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। সেইসব সমাধিগুলোকে হলুদ রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সমাধিগুলোতে কমিটির উদ্যোগে দিপাবলী উৎসবের দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি, ধূপকাঠি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।

 

তমাল মালাকার বলেন, এবারের আয়োজনে মহামারির বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শ্মশানের মূল ফটকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরে শ্মশানে প্রবেশের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়।

অপরদিকে, বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি গোপাল সাহা বলেন, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ দীপাবলী উৎসব হয়ে থাকে বরিশাল আদি মহাশ্মশানে। ভারত এবং নেপালসহ বহু দেশ থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন তাদের মৃত স্বজনদের স্মরণে।

 

এজন্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএমপি কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন।

 

তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত আলোসহ অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।

 

প্রসঙ্গত, একর ৯৬ শতাংশের এই বরিশাল আদি মহাশ্মশানে প্রতিবছর শ্মশান দীপাবলী উৎসবে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। কেউ উৎসব দেখতে আসেন, আর কেউ স্বজনদের সমাধিতে মোমবাতি এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। পাশাপাশি মৃত স্বজনদের প্রিয় খাদ্য দিয়ে স্মরণ এবং আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন।