ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

হাসপাতালে ফেলে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিল ম্যাজিস্ট্রেট

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

হাসপাতালে ফেলে যাওয়া নবজাতকের দায়িত্ব নিল ম্যাজিস্ট্রেট
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রী স্বপ্না রানী (ছদ্মনাম) এক ছেলে সন্তান জন্ম দিয়ে তাকে রেখে পালিয়ে যায়। সেই নবজাতকের সেই শিশুর দায়িত্ব পেল নিঃসন্তান এক দম্পতি। ওই নিঃসন্তান দম্পতির একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি এসিল্যান্ড হিসেবে সিলেট বিভাগে কর্মরত আছেন। 

জন্মের পর থেকেই শিশুটিকে হাসপাতালের নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রের (স্ক্যানু) ৫ নম্বর বেডে রাখা হয়েছে। শিশুটি সুস্থ রয়েছে। তাকে শিশু বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা সেবাযত্ন  করছেন। 

১০ বছর বিবাহিত জীবনে ওই দম্পতির কোনো সন্তান হয়নি। চিকিৎসকরা ওই দম্পতিকে জানিয়েছেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের আর কোনো দিন সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এরআগে গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবজাতকের খবর প্রকাশিত হলে তার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেন অনেক বিত্তবান মানুষ। 

শিশুটিকে নেয়ার জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রবাসী, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়। সভায় ১৮ জন সদস্যের প্রত্যেকেই উপস্থিত ছিলেন। আবেদনগুলোর যাচাই-বাছাই শেষে আবেদনকারী দম্পতিদের মধ্যে একজন দম্পতির হাতে শিশুটির দায়িত্বভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দু-একদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দম্পতির হাতে হস্তান্তর করা হবে।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক আরিফুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) আনম আবুজর গিফারী, এনডিসি শাহেদ আরমান, কুষ্টিয়ার সমাজসেবা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মুরাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন বলেন, জেলা প্রশাসক শিশুটির সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত নবজাতক শিশুর কোনো আত্মীয়-স্বজনও খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেননি। শিশুটি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ আলী। 

প্রসঙ্গত, , গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য এক নারী আসেন। চিকিৎসক ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেন।

কিন্তু ওই নারী গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই চিকিৎসক তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরে সকাল ৮টার দিকে তার তীব্র আকারে পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে গাইনি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই নারী নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্য দেন। কিছুক্ষণ পর ওই নারীকে ওয়ার্ডে পাঠানো হলে একপর্যায়ে তিনি সদ্য নবজাতক সন্তানকে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যান। সেই থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে।