ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪ |

EN

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রহিমপুর এলাকার সীমানা থেকে তুষার খাঁ (৩৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের কাছ হস্তান্তর করা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত এলাকা থেকে তুষারকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ধরে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে বিবস্ত্র করে মুমূর্ষু অবস্থায় সীমানায় ফেলে চলে যায়। 

তুষার খাঁ নওগাঁর রানীনগর এলাকার মোসলেম খাঁর ছেলে। সম্প্রতি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদল এলাকায় তার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

স্থানীয় ও বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, ব্রাহ্মণপাড়ার সীমান্তবর্তী নারায়ণপুর (দক্ষিণপাড়া) এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোরে মসজিদ থেকে ভারতীয় এক মুসল্লি ফজরের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফেরার পথে সীমান্তে এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। 

বিষয়টি তিনি মসজিদের ইমামকে জানিয়ে ভারতে তার বাড়ি চলে যান। পরে বিষয়টি স্থানীয় লোকজন জানতে পেরে বিজিবি সদস্যদের খবর দেন। খবর পেয়ে শশীদল বিওপির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সীমানার ভারত অংশে ওই যুবককে গুরুতর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। 

পরে বিজিবি বার্তা পাঠালে বিএসএফ ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে অজ্ঞাত যুবক কোন দেশের নাগরিক তা নিশ্চিত করতে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হয়। দুপুর ১২টায় আহত ওই যুবকের ফুফু আসমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। ততক্ষণে ওই যুবক মারা যান।

এ সময় বিজিবি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে মৃত দেখতে পান। 

নিহতের ফুফু আসমা বেগম বলেন, আমার স্বামী কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তুষার আমার স্বামীকে দেখতে বুধবার সকালে হাসপাতালে আসে। সেখান থেকে সকাল ১০টায় তুষার শশীদল এলাকায় আমাদের বাড়ির উদ্দেশে আসে। তারপর থেকে তুষারের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা উপজেলা শশীদল রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তাকে খুঁজে পাইনি। পরে আজ সকালে ফেসবুকে ছবি দেখতে পেয়ে আমি হাসপাতাল থেকে দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে নিশ্চিত হই এটি আমার ভাইয়ের ছেলে তুষার এবং বিজিবিকে পরিচয় নিশ্চিত করি। তখন সে মারা যায়।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী তানভীর আবসাল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। নিহতের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

শশীদল বিওপির বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক জানান, ২০৫৮ মেইন পিলার থ্রিএস এবং ফোরএসের মাঝামাঝি বাংলাদেশের নারায়ণপুর দক্ষিণপাড়া থেকে ১০ ফুট ভারতের অভ্যন্তরে রহিমপুর এলাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় ওই যুবক পড়ে ছিল। ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় এবং তিনি বাংলাদেশ নাকি ভারতের নাগরিক, বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় তাকে যথাসময়ে বাংলাদেশে আনতে পারিনি। 

তিনি জানান, আহত যুবকটি ভারতীয় সীমান্তে পড়ে ছিল। তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিএসএফ তাদের দেশে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেয়নি। পরে আমরা যুবকের পরিচয় জানতে পেরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে খবর দেই। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আমরা সন্ধ্যায় যুবকের মরদেহ বাংলাদেশ সীমান্তে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে মৃতদেহটি বিজিবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। 

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, তুষারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।