ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বুধবার, জুলাই ৩, ২০২৪ |

EN

পাঁচটি ইস্যু

বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, এপ্রিল ১, ২০২২

বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর
পাঁচটি ইস্যুতে বিএনপি'র মধ্যে ক্রমশ বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ লাভ করছে। সর্বশেষ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সরকারের পতনের লক্ষ্যে শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে যে কর্মসূচি তা বিএনপি নেতিবাচকভাবে নিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন যে, দলের বাইরে গিয়ে এ ধরনের আন্দোলন এক ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ এবং সরকারের নির্দেশে এ ধরনের আন্দোলন হচ্ছে। তবে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা শওকত মাহমুদ দাবি করেছেন যে, এটির সাথে কোনো ষড়যন্ত্র যুক্ত নেই। যে যে কোনো প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন করতে পারে। মূল লক্ষ্য হলো সরকারকে হঠানো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই পেশাজীবীদের সরকার পতনের আন্দোলন বিএনপির মধ্যে তোলপাড় তৈরি করেছে। শুধু এটি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে এটি ছাড়াও আরো চারটি ইস্যুতে বিএনপি'র মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

১. পেশাজীবী নিয়ে বিভক্তি: বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের নিয়ে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের দুটি বিভক্তি এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। একদিকে আছেন শওকত মাহমুদ, অন্যদিকে ডাক্তার জাহিদ। তারা দু'জন দুই মতাবলম্বী। এর আগেও শওকত মাহমুদ সরকার পতনের লক্ষ্যে মুক্তাঙ্গনে কর্মসূচি দিয়েছিলেন। সেই কর্মসূচির কারণে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন যে কর্মসূচি তিনি পালন করেছেন, সেজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। তবে এই কর্মসূচিতে বিএনপি'র অনেক মাঠ পর্যায়ের নেতাকে দেখা গেছে। এটি বিএনপি'র জন্য একটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, এর পেছনে সরকারের হাত রয়েছে।

২. জাতীয় সরকার প্রসঙ্গ: বিএনপি বলেছিল যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু এর মধ্যেই জাতীয় সরকারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে এবং এই জাতীয় সরকারের দাবির ব্যাপারে বিএনপি'র অনেকেই ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। বিএনপি'র মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জাতীয় সরকার নিয়েও দুই রকমের মতামত পাওয়া গেছে। একদল মনে করছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। অন্যপক্ষ মনে করছে যে, জাতীয় সরকারের দাবিতে সকল রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে আনা হবে। এটি একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা।

৩. তারেক জিয়ার নেতৃত্ব: তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপিতে বিভক্তি পুরনো ছিলো। সেই বিভক্তি এখন নতুন করে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার একেকটা সিদ্ধান্ত বিএনপি'র মধ্যে নানা রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, তারেক জিয়া যেভাবে দল পরিচালনা করতে চাইছে সেটি কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পরিচালন পদ্ধতি হতে পারে না। ফলে তারেক জিয়ার নেতৃত্ব নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিএনপি'র একটি অংশ মনে করছেন, বর্তমান বাস্তবতায় কিছুদিনের জন্য হলেও তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া উচিত এবং কিছুদিনের জন্য দলের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া উচিত। শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুতেও বিএনপি ভাঙবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

৪. ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন: ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন নিয়ে বিএনপি'র মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিলো। এখন তা নতুন আকার ধারণ করেছে। বিএনপি'র একটি অংশ চাইছে যে, প্রাক্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা। কিন্তু বিএনপি'র অন্য একটি অংশ মনে করছে যে, শুধুমাত্র বিএনপিপন্থী ২০ দলীয় জোটকে নিয়েই আন্দোলন করা উচিত। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আসলে রূপরেখা কি হবে এবং কাদেরকে নেয়া হবে এ নিয়ে বিএনপিতে মতবিরোধ এখন তুঙ্গে।

৫. খালেদা জিয়ার অবস্থান: বিএনপি'র মধ্যে খালেদা জিয়ার অবস্থান নিয়েও বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। বিএনপি'র একটি অংশ মনে করছে, বর্তমান বাস্তবতায় বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মধ্যে না জাড়ানোই ভালো। অন্যদিকে আরেকটি অংশ মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার আলাদা ইমেজ রয়েছে। কাজেই খালেদা জিয়ার ইস্যুকে রাজনীতিতে যুক্ত করা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার যে শর্তযুক্ত জামিন, সেই জামিন প্রত্যাখ্যান করে বেগম খালেদা জিয়াকেই আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে একটি অংশ মতামত দিচ্ছে। 

বিএনপি নেতারা নিজেও স্বীকার করছেন দলের ভেতর নানারকম অস্থিরতা চলছে। নানা রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপি'র একজন নেতা বলেছেন যে, দলকে ভাঙার চক্রান্ত করছে সরকার। বিএনপি'র অন্যতম নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন যে, নির্বাচনের আগে সরকার অনেক রকমের কৌশলই করবে। অনেক বিএনপি নেতাকে নিয়ে সরকারের কেউ কেউ বৈঠক করছেন, এমন দাবিও তিনি করেছেন। তবে শেষপর্যন্ত এইসব সফল হবে না বলে তিনি মনে করেন। বিএনপি'র এই বহুমুখী মতবিরোধ বিএনপিকে ভাঙ্গনের দিকে নিশ্চিতভাবে নিয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

সৌজন্যে: বাংলাইনসাইডার