ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

বাংলাদেশের নির্বাচন: ভিন্ন মেরুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, আগস্ট ৩, ২০২২

বাংলাদেশের নির্বাচন: ভিন্ন মেরুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশী দূতাবাসগুলো ব্যাপক তৎপর রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের এ নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা ব্যাপক লক্ষণীয়। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করছে, সুশীল সমাজের সাথে কথা বলছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও মতবিনিময় করেছেন। এই সমস্ত মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে তার একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। তারা বলেছে যে, আগামী নির্বাচন তারা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ দেখতে চায়, এই নির্বাচনে যেন সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে সেটি তারা দেখতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করেছে। এই রূপরেখা নিয়ে তারা বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলছে যেন তারা অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এই রূপরেখায় নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন যেন সুস্পষ্টভাবে হয় তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেই অবস্থানের সঙ্গে ভারতের অবস্থান একমত নয়। বরং ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। বিক্রম দোরাইস্বামী এটাও বলেছে, বাংলাদেশ সরকার কিভাবে নির্বাচন করবে সেটি বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের বিষয়। বিক্রম দোরাইস্বামীর এই আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ভারতের মনোভাব বিভিন্ন কূটনৈতিক বৈঠকে সুস্পষ্ট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন যেভাবে দেখতে চায় ভারত সেই অবস্থানে নেই। বরং ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে যেন কোনোভাবেই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ক্ষমতায় না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশে হলো তাদের প্রধান প্রতিবেশী। সবকিছু বদলানো যায়, প্রতিবেশী বদলানো যায় না। কাজেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র যদি ভাল থাকে তাহলে ভারতও ভালো থাকবে। ভারত মনে করে যে, ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর উত্থান যেন বাংলাদেশের মাধ্যমে না ঘটে সেটি ভারতের বড় মাথাব্যথার বিষয়।

ভারতের থিঙ্কট্যাংকরা মনে করেন, গত এক যুগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ট্রানজিট সুবিধাসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত প্রশ্নে বাংলাদেশ ভারত অনেকদূর এগিয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এই সমস্যাগুলো আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে তোলা সম্ভব। আর এ কারণে ভারত মনে করে যদি এমন একটি সরকার বাংলাদেশে আসে যে সরকারটি পাকিস্তানপন্থী কিংবা মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক তাহলে বাংলাদেশে উগ্র-মৌলবাদের উত্থান ঘটবে, যেটা ভারতের জন্য বিপদজনক। ভারত এটাও মনে করে যে, বাংলাদেশের কোনো সরকার যদি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেয়, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় সেক্ষেত্রে ভারত সমস্যায় পড়বে। এসব কারণেই ভারত মনে করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন যেভাবে হোক না কেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে যেন ধর্মান্ধ মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান না ঘটে। আর এটি ভারতের প্রথম বিবেচনা। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশে নির্বাচন চাইছে ভারতে সে ব্যাপারে একমত নয়। আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন এবং সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর একান্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। এই বৈঠকটি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট বলে অনেকে মনে করছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন যে, ভারত মনে করে যে বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের মতো করেই হোক।