ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

জাতীয় পার্টি কার সাথে থাকছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ২, ২০২২

জাতীয় পার্টি কার সাথে থাকছে?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারা হিসেবে জাতীয় পার্টি এখনো টিকে আছে। নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার শক্তি নেই কিন্তু অন্য একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই শক্তির জন্যই স্বৈরাচারী এরশাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এরশাদকে কাছে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেছে এবং ১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, জাতীয় পার্টি যার দিকে পক্ষপাত দেখিয়েছে বা যার সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছে তারাই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। আর এই শক্তির কারণে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতিতে ব্যালেন্স অব পাওয়ার মনে করা হয়। ২০০১ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশীদার এবং বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি গাঁটছাড়া বেঁধেছে। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি হবে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে নাকি বিএনপির সঙ্গে জোট করবে এটি একটি কোটি টাকার প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের উপরই নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন কিভাবে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টির নেতারা যে সমস্ত বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন তাতে মহাজোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সংশয় প্রকাশ করছেন। সর্বশেষ গত রোববার নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন যে, আমরাও দিছি। অর্থাৎ রাতের বেলা ভোটের কথা তিনি স্বীকার করেছেন। এটির মাধ্যমে রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের মেরুকরণ ঘটলো মনে করা হয়। এর আগে, আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের নেতা রাশেদ খান মেনন ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি সেই প্রশ্ন থেকে সরে আসেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু মুজিবুল হক চুন্নু রাতের ভোট নিয়ে যা বলেছেন, সেটি থেকে এখন পর্যন্ত সরে আসেননি। তাছাড়া এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সুস্পষ্টভাবে সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেই মন্ত্রিসভায় মহাজোট বা ১৪ দলের কাউকে রাখেনি। তখন থেকেই জাতীয় পার্টি বলছে, তারা বিরোধী দল হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টির ভূমিকা শুধু বিরোধী এর চেয়েও বেশি কিছু বলে অনেকে মনে করছেন।

জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে রওশন এরশাদের কারণেই শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ওই নির্বাচন থেকে এরশাদও শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু রওশন এরশাদ শেষ পর্যন্ত তার অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনে থাকেন এবং ওই নির্বাচনের পর যে সংসদ গঠিত হয় সেই সংসদে রওশন এরশাদই বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। সেই নির্বাচনে জিএম কাদের অংশগ্রহণ করেননি। সেই জিএম কাদেরই এখন জাতীয় পার্টির সভাপতি। রওশন এরশাদ অসুস্থ। মাঝখানে তিনি অল্পদিনের জন্য দেশে এসেছিলেন, আবার তিনি ব্যাঙ্ককে চিকিৎসার জন্য গেছেন। রওশন এরশাদ না থাকার কারণে জাতীয় পার্টিতে আওয়ামীবিরোধী অংশ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এর আগে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মত বড় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে জাতীয় পার্টি আস্তে আস্তে বিএনপির দিকে ঝুঁকছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করেন। বিশেষ করে জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিতে চান, এই মনোভাব থেকে সরকারবিরোধী অবস্থানে গেছেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন যে, নির্বাচনের পর মহাজোট নেই। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কি হবে, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।

অনেকে মনে করেন যে, জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করবে, মহাজোটে থাকবে না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, জাতীয় পার্টি হলো বিএনপির শেষ চমক। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি বিএনপির দিকে আসবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, শেষ পর্যন্ত মহাজোট থাকবে এবং জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকেই নির্বাচন করবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, জাতীয় পার্টি কার সঙ্গে থাকবে এটি নির্ভর করে সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। যদি দেখে যে ভোটের পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের অনুকূলে আছে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে। যদি সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়, সরকার সংকটে পড়ে তাহলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাবে। সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে যার দিকে গেলে জাতীয় পার্টি সুবিধা পাবে সেদিকেই জাতীয় পার্টির ভিড় জমাবে।