ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

ভোলা কি বিএনপির টেস্ট কেস?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ২, ২০২২

ভোলা কি বিএনপির টেস্ট কেস?
গত রোববার ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আব্দুর রহিম নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতা মারা গেছেন। পুলিশসহ অনেকে আহত হয়েছেন। বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রোববার দুপুরে জেলা বিএনপির সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে আটক করেছে। ভোলার রোববারের ঘটনাটা যারা দেখেছেন, সেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, বিএনপি ছিল মারমুখী, আগ্রাসী। বিএনপির নেতাকর্মীরা শুরু থেকে পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছে এবং একটা সহিংসতার ঘটানোর জন্য চেষ্টা করেছে। গত কিছুদিন ধরেই বিএনপি সহিংস আন্দোলন উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি মনে করছে যে, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে হটানো যাবে। আর এ কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকাতেও বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। কিন্তু ঢাকাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম থাকার কারণে সেরকম সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করতে পারছে না। বিএনপির নেতারা আলাপ-আলোচনায় বলেছেন, রাজপথ উত্তপ্ত করতে চায়, এজন্য তাদের একটি লাশের দরকার। বিশেষ করে এই রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঢাকায় হলে একটা বড় ধরনের আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি হয় বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। আর সেই বিবেচনা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের ব্যর্থতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এক ধরনের কঠোর মনোভাবের কারণে ঢাকায় সুবিধা করতে পারছে না বিএনপি। তবে বিএনপির নেতারা মনে করে যে, যেকোনো মূল্যেই ঢাকাকে অস্থিতিশীল করতে হবে।

বিএনপি ২০১৩-১৪ সালে সর্বশেষ বড় ধরনের আন্দোলন করেছিল। এই সময়ে লাগাতার হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওসহ নানা রকম কর্মসূচি দিয়ে জনজীবনে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছিল। বিএনপি নেতারা সে সময় আন্দোলনে বিজয়ী হতে পারেনি। এর ব্যাখ্যা হিসেবে বিএনপি নেতারাই মনে করেন যে, ঢাকাকে অস্থিতিশীল করতে পারেনি জন্যই তারা বড় ধরনের আন্দোলন করতে পারেনি। আর এই কারণেই এবার আন্দোলনের আগে ঢাকার দিকেই সবচেয়ে বড় নজর বিএনপি নেতাদের। তবে ঢাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরির আগে ঢাকার বাইরের আবহাওয়া গরম করা হলো বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল। বিএনপি এই কৌশল শুরু করেছে, বিএনপি নেতারা আগস্ট মাস জুড়ে নানা রকম কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চায়। আর এরই টেস্ট কেস ছিলো ভোলা। যেহেতু ভোলায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা একটু ভালো, সেজন্য ভোলায় বিএনপি অবশেষে একটি লাশ পেয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের যে নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকায় এখন বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি বেগবান করতে চায় আজ এই স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর মৃত্যু নিয়ে তারা গায়েবি জানাজা করেছে এবং সামনের দিনগুলোতে বিএনপির আরও কর্মসূচি দিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিএনপির একজন নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সম্প্রতি বলেছেন যে, সরকার পতনের লক্ষ্যে তারা প্রয়োজনে অবরোধ,ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সেই কর্মসূচি ঘোষণার পটভূমি তৈরি করার জন্যই কি ভোলায় সহিংসতার ঘটনা হলো কিনা সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন যে, সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য রাজপথের আন্দোলনের তাদের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বলা হয়েছে যে, বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চায়, তাহলে সরকার বাধা দেবে না। এমনকি যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়, তাহলে তাদেরকে ঢেকে নিয়ে আসা হবে এবং চা খাওয়ানো হবে। এই বক্তব্যের পর বিএনপির সহিংস আন্দোলন অনেকটাই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কিন্তু তারপরও বিএনপি যেকোনো প্রকারে আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। সেজন্যই ভোলায় তারা একটি টেস্ট কেস করে দেখলো আন্দোলন করা সম্ভব কিনা। সেই টেস্ট কেসের ফলাফল বুঝা যাবে সামনে বিএনপি কি ধরনের কর্মসূচি দেয় তার উপর।