ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৮, ২০২২

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসবে বিএনপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায়। বিএনপি এখন পর্যন্ত এই অবস্থানে অটল। বারবার বিএনপি বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে তারা যাবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মধ্যে অন্য সুর পাওয়া গেছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছে যে, এটি চাপ দেওয়ার একটি কৌশল। সরকার যেন একটি সমঝোতায় আসে।

বিএনপি মনে করছে যে, শেষ পর্যন্ত যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হয়, তাহলে তারা নির্বাচনে যাবে। বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সারাদেশে বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠ জরিপ করা হচ্ছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার উদ্যোগে ৩০০ আসনে বিএনপির প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজও চলছে। লন্ডনে এখন তারেক জিয়া হাওয়া ভবন খুলেছেন বলেও বিএনপির নেতাদের কাছে খবর আছে। এমনকি এবার মনোনয়নে কোন আসনের জন্য কত দিতে হবে, সে ব্যাপারেও বিএনপির মধ্যে নানা খোঁজখবর চলছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বয়কট করবে, এটি বিএনপি নেতারাই বিশ্বাস করতে চান না।

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি আছে। এর মধ্যে অনেক কিছুই ঘটবে, দেখুন, অপেক্ষা করুন। নির্বাচন, লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আয়ের একটি বড় উৎস। কারণ, গত ২০১৮ সালের নির্বাচন করে তিনি অন্তত ৫০০ কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছিলেন বলে বিএনপির নেতারাই দাবি করেন। সেই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তারেক জিয়ার বড় অংকের একটা উপার্জন নষ্ট হবে। সেই ঝুঁকি কি তিনি নিবেন? বিএনপির কোনো কোনো নেতা অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তারা বলছেন যে, এসব নয়। বর্তমান বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে বিএনপি সরে আসার চিন্তাভাবনা করছে।

বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন যে, সরকার এখন চাপের মুখে রয়েছে। সরকারের জনপ্রিয়তাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক সংকট, লোডশেডিং, রিজার্ভ কমে যাওয়া ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে দেশে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চলছে এবং জনগণ সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এরকম অবস্থায় বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সেটা সরকারকে ওয়াকওভার দেওয়া হবে। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, কিছু কিছু বাস্তবতায় ২০১৮ সালের মত নির্বাচন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এবার যে মাঠ প্রশাসন থাকবে তারা ২০১৮ সালের মত কাজ করতে পারবে না। তাছাড়া এখন যারা মাঠ প্রশাসনে আছেন, তাদের অনেকেই বিএনপি-জামায়াতপন্থি বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।

বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেছেন যে, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন বাড়াবাড়ি করার ক্ষেত্রে অনেকবার চিন্তা করবে। কাজেই ২০১৮ সালের মত নির্বাচন এবার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই বাস্তবতায় বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত যদি ২০১৪ সালের মডেলের মতও নির্বাচন করা যায়, তাহলে তা বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে।

বিএনপির কিছু নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে পাঁচটি মৌলিক বিষয়কে সামনে আসছেন। তারা মনে করছেন যে, এই পাঁচটি শর্ত পূরণ করা হলে, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচন কমিশন যেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন নির্বাচন তদারকি করে তা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, নির্বাচনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ। চতুর্থত, নির্বাচনে সেনাবাহিনী রাখা এবং পঞ্চমত, নির্বাচনের আগে সকল দল নিয়ে সরকার গঠন করা। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বর্তমান বাস্তবতায় এই পাঁচটি দাবি যদি শেষ পর্যন্ত মানা হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত যেতেও পারে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, অন্যকোনো পথ নাই, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনেই যাবে না।