ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

আন্দোলন নিয়ে ত্রিমুখী সংকটে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, জুলাই ২৬, ২০২২

আন্দোলন নিয়ে ত্রিমুখী সংকটে বিএনপি
ক্রমশ সংকট বাড়ছে বিএনপিতে। রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। আজও বিএনপি তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছে এই প্রতিবেদন লেখার সময়। কিন্তু এসব রাজনৈতিক দলগুলো এতই অস্তিত্ববিহীন, গুরুত্বহীন যে এসব বৈঠক স্রেফ একটি আনুষ্ঠানিকতা এবং মিডিয়া গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়া আর কোনো অবদান রাখতে পারছে না রাজনীতিতে। বিএনপি কি করতে চাই তা স্পষ্ট নয়। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে তারা আন্দোলন করতে চান। কিন্তু এই আন্দোলন কখন কিভাবে তারা শুরু করবেন এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানামুখী সংকট রয়েছে। বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে আন্দোলন নিয়ে বিএনপি এখন মোটামুটি ত্রিমুখী সংকটে রয়েছে।

প্রথমত, বিএনপি অপ্রস্তুত। আন্দোলন শুরু করার ক্ষেত্রে বিএনপির প্রথম সংগঠন হলো বিএনপি'র প্রস্তুতির অভাব। দলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে নানারকম মামলা রয়েছে। এই সমস্ত মামলাগুলো যেকোনো মুহূর্তে সক্রিয় হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। আবার বিএনপির কোন কোন নেতা এখনই আন্দোলন শুরু হলে তাদের আবার ধরপাকড় শুরু হবে এবং তখন তাদের পাশে কেউ থাকবে না বলে মনে করেন। যার ফলে কর্মীদের মধ্যে আন্দোলনের অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া বিএনপির অনেক জনপ্রিয় নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আন্দোলন সংগঠিত করার মত যে মাঠের নেতৃত্ব, সেই নেতৃত্ব এখন নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির যে নেতারা আছেন তারা শুধু প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি ভিত্তিক অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তৃতা দেন। কিন্তু রাজপথে আন্দোলন করার মতো শারীরিক, মানসিক অবস্থা তাদের আছে কিনা এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। যার ফলে আন্দোলনের কথা বললেও বিএনপি আসলে মাঠে আন্দোলনে যেতে সক্ষম কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে।

দ্বিতীয়ত, সরকারের মনোভাব। বিএনপি'র নেতারা মনে করছেন যে, এরকম একটি আন্দোলন হলে সরকার কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা স্পষ্ট নয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে, বিএনপি যদি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে তাহলে তাদেরকে করতে দেয়া হবে। এমনকি তারা যদি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করতে চায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে চা এর দাওয়াত দিবেন এবং তাদের কথা শুনবেন। এর মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে, বিএনপির আন্দোলন ও অন্যান্য গতানুগতিক ধারায় এবার সরকার মোকাবেলা করবে না। বিএনপি প্রথমদিকে যেটা মনে করেছিল যে, আন্দোলন করলে পুলিশ বাধা দেবে, ভাঙচুর হবে, জ্বালাপোড়া হবে এবং এটি দিয়ে একটি আতঙ্ক তৈরি করা হবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটি সফল হবে না বলেই বিএনপি নেতারা মনে করছেন। সরকারের কৌশল কি বা সরকার আন্দোলনের পর্যায়ে কি ধরনের চমক দেবে সেই ব্যাপারটি বিএনপির কাছে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট নয়। ফলে আন্দোলন নিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্ধ এখনো কাজ করছে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সমর্থন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলও বিএনপি'র ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে না। তারা অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। কিন্তু সেই নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে এমনটি মনে করেন না। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহল এটাও মনে করে না যে, এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুর ইত্যাদি আন্দোলন করতে হবে। কাজেই এইরকম যদি কোনো কারণে সহিংস হয়ে উঠে এবং সেখানে যদি জ্বালাও-পোড়াও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে, সেটির দায় বিএনপির উপর বর্তাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এ কারণেই আন্দোলন নিয়ে এক ধরনের সংকটে রয়েছে বিএনপি। তাছাড়াও, বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। কারণ, বিএনপি আন্দোলন শুরু করলে খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ কি হবে, সেই প্রশ্নটি নিয়েও বিএনপির চিন্তিত। সবমিলিয়ে আন্দোলনের কথা বললেও সমস্যা। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাবে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।