ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

শেখ হাসিনার নতুন চমক: চায়ের দাওয়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: রবিবার, জুলাই ২৪, ২০২২

শেখ হাসিনার নতুন চমক: চায়ের দাওয়াত
সরকার এবং বিরোধী দলের আন্দোলন নিয়ে যখন কথার বাহাস চলছে, যখন বিএনপি সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে তার জবাবে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে দেখে নেব, মোকাবেলা করবো জাতীয় হুমকি দিচ্ছে। ঠিক সেইসময় শান্তির বার্তা ছড়ালেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আজ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের একটি যৌথ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হন এবং সেখানে তিনি বিরোধী আন্দোলনকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে তাকে স্বাগত জানাই, কারণ আমি রাজনীতি করি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যদি তারা কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে আসে তাহলে তাদেরকে চা খাওয়ানোর দাওয়াত দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্য রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ তৈরি করলো। বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাপে এই বক্তব্য জল ঢেলে দিলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত এক দশক ধরেই শেখ হাসিনা রাজনীতিতে নানারকম কারিশমা এবং দূরদর্শিতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যখন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনে অনড়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তিনি নির্বাচন করবেন না -এই দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করছেন ঠিক সেই সময় শেখ হাসিনা তাকে গণভবনে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেই নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এটির রাজনৈতিক মাশুল তাকে এখনো দিতে হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো যখন মৃত্যুবরণ করেন সেই সময় বেগম খালেদা জিয়া সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের নামে সবকিছু অচল করে দিয়েছিলেন। এরমধ্যে কোকোর মৃত্যু সংবাদের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমস্ত প্রটোকল ভেঙে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চলে যান। সেখানে তার সাথে যে অনভিপ্রেত আচরণ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এটি জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। এর ফলেও বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেকটি চমক দেন জাতিকে। যখন বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছিলেন, যখন আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা কিসের সংলাপ, কার সঙ্গে সংলাপ ইত্যাদি আক্রমণাত্মক বক্তব্য উত্থাপন করছিলেন ঠিক সেই সময় প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে গণভবনে দাওয়াত দেন। একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন। প্রধানমন্ত্রী এই রাজনৈতিক কৌশলের কাছে পরাস্ত হয় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তারা নির্বাচনে শর্তহীনভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে।

চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এখন এক কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক সংকট পুঞ্জীভূত রূপ ধারণ করেছে, রাজনৈতিক সংকটের পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে, লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা অস্বস্তি দানা বেধে উঠছে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী নতুন আন্দোলনের শঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছিল। সেই আন্দোলনের সম্ভাবনার মধ্যেই বিরোধীদলের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল, একইরকম হুমকি দেয়া হচ্ছিল সরকারি দলের পক্ষ থেকেও। কিন্তু এই সমস্ত হুমকি উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা আরেকটি রাজনৈতিক চমক দিলেন। এর মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেমন বিভ্রান্ত হলো, তেমনি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার গভীরতা এবং তার চিন্তা চেতনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে যোজন যোজন দূরত্ব তার আরেকবার প্রমাণিত হলো। শেখ হাসিনা যে কাজগুলো করেন, যেভাবে চিন্তা-ভাবনা করেন তার সঙ্গে তাঁর দলের চিন্তা-চেতনার যে বিস্তর ফারাক, তার এই চায়ের দাওয়াতের রাজনৈতিক কৌশলের মধ্যে দিয়ে তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। এর ফলে বুঝাই যাচ্ছে যে, নির্বাচনের আগে সুস্পষ্টভাবে শেখ হাসিনা একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই কৌশলটি কি, তা খুব শীঘ্রই নিশ্চয়ই পরিষ্কার হবে।