ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

আরেকজন তাজউদ্দীন কি পাবে আওয়ামী লীগ?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, জুলাই ২৩, ২০২২

আরেকজন তাজউদ্দীন কি পাবে আওয়ামী লীগ?
আজ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের জন্মদিন। ১৯২৫ সালের এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন এই ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ। তাজউদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে থাকবেন। বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই সবচেয়ে বৃদ্ধিমান রাজনীতিবিদ হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের নাম বারবার আসবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সেই সময় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাজউদ্দীনের অনবদ্য ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছিল এবং তাজউদ্দীনের এই ভূমিকাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের পথে ত্বরান্বিত করেছিল বলেই ইতিহাস বিশ্লেষকেরা মনে করেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে আসার পর ষড়যন্ত্রকারীরা তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করে। সে দূরত্ব তৈরির প্রয়াসের অংশ হিসেবে ১৯৭৪ সালে ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেন। মন্ত্রিসভা থেকে সরে গেলেও তাজউদ্দীন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বরং নিজ আদর্শে অটল থেকে জাতির পিতার প্রতি তার নীরব সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন। আর এটি জানতেন খুনি মোস্তাক চক্র। খুনি মোস্তাক চক্র এ কারণেই পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে জাতীয় চার নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদেরকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ৩রা নভেম্বর। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমাণ করেন যে, তিনি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। জীবন দিয়ে তিনি জাতির পিতার আদর্শ রক্ষা করেছিলেন।

তাজউদ্দীন আহমেদ আজকের যুগেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং আওয়ামী লীগে অনেক তাজউদ্দীন আহমেদ দরকার বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাজউদ্দীন আহমেদ কেন প্রাসঙ্গিক? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক জীবন দর্শনটা অনুভব করতে হবে। তাজউদ্দীন আহমেদ অনেক মেধাবী একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র ছিলেন। তিনি সংগঠনের খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়গুলোর দেখতেন কিন্তু কখনো বড় নেতা হতে চাননি। বরং সব সময় তিনি নেপথ্যের কারিগর হিসেবেই কাজ করেছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের দিকে যদি আমরা তাকিয়ে থাকি তাহলে দেখবো যে, তাজউদ্দীন আহমেদের মতো একজন নেপথ্যের কারিগর যিনি নেতার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে দিবেন, দলের নীতি আদর্শগুলোকে তৈরি করবেন, নীরবে-নিভৃতে কাজ করবেন, এরকম নেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে। তাজউদ্দীন আহমেদ দলের নেতার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নীরবে নেপথ্যে কাজ করেছেন। তাজউদ্দীন আহমেদ এখনকার যুগে প্রাসঙ্গিক এই জন্য যে, কঠিন সময়ে নেতার নির্দেশ এবং আদর্শ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারা তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্ধ করে। এই সময় জাতির পিতার নির্দেশগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন এবং বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। তাজউদ্দীন আহমেদের এই ভূমিকাটি আমাদের রাজনীতির জন্য একটি বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে থাকবে। কারণ, দলের মূল নেতার অনুপস্থিতিতে তার নীতি আদর্শ যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, সেটি তাজউদ্দীন আহমেদ বারবার প্রমাণ করেছেন। বিশেষ করে সংকটকালীন সময়ে যে নেতা শূন্যতা পূরণ হতে না দেয়া, সেটি হলো তাজউদ্দীনের শিক্ষা। তাজউদ্দীন আহমেদ এই সময়ে প্রাসঙ্গিক এ কারণে যে, তাজউদ্দীন আহমেদ যখন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন, খুনি মোস্তাক যখন তাকে কোণঠাসা করেছিলেন, তখনও তিনি বিভ্রান্ত হননি, দলের নীতি আদর্শ বিচ্যুত হননি। বরং নেতার আদর্শেই অনুগত থেকেছেন, নীরবে থেকেছেন। এটি আজকের বাস্তবতায় একটি বড় শিক্ষা। আর সর্বশেষ তাজউদ্দীন আহমেদ যা শিখিয়েছেন, তা হলো আদর্শের জন্য জীবন দেয়া। আওয়ামী লীগে এখন আরেকজন তাজউদ্দীন পাওয়া যাবে কিনা, এই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি প্রত্যাশার জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ সবসময় বলতে পারে যে, আওয়ামী লীগের জন্য এরকম প্রচুর তাজউদ্দীন দরকার।