ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, মে ১৯, ২০২৪ |

EN

বাংলাদেশও কি একজন নারী রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শনিবার, জুলাই ২৩, ২০২২

বাংলাদেশও কি একজন নারী রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে?
ভারতে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাবেক রাজ্যপাল, ওড়িষ্যা রাজ্যের বাসিন্দা দ্রৌপদী মুর্মু নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিভা পাটিলের পর মুর্মু হলে দ্বিতীয় নারী রাষ্ট্রপতি এবং তিনি হলেন প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি সরকার একটি চমক দেখিয়েছে। আদিবাসী নারীকে রাষ্ট্রপতি করে তাদের বিরুদ্ধে যে মৌলবাদ এবং সম্প্রসারণবাদের অভিযোগ উঠেছিলো সেই অভিযোগের জবাব দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, দ্রৌপদী মুর্মর এই রাষ্ট্রপতি হওয়ার মধ্য দিয়ে কি ভারতের সেক্যুলার এবং সকল ধর্মের সহবস্থান নীতির প্রতিফলন ঘটবে? এই প্রশ্ন যখন ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বাংলাদেশের আগামী রাষ্ট্রপতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করছেন।

বর্তমান আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী এপ্রিলে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রপতি একাধিকক্রমে দুইবার এই পদে থাকতে পারেন। সেই হিসেবে আবদুল হামিদের মেয়াদ এবারই শেষ হচ্ছে, বাংলাদেশকে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি বরণ করতে হবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবেন? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলোচনা চলছে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত নতুন রাষ্ট্রদূতের ব্যাপারে তারা কোনো চিন্তা-ভাবনা বা আলাপ-আলোচনা করেননি, এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, প্রধানমন্ত্রী নিজে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি পদে একজন ব্যক্তিকে হয়তো শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন করবেন। কারণ, চলতি বছরের শেষদিকেই এই রাষ্ট্রপতির প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত করবেন তিনি যে রাষ্ট্রপতি হবেন এ নিয়ে কোনো সংশয় সন্দেহ নেই। এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ কাকে রাষ্ট্রপতি করবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

ভারতে দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কি একজন নারী হতে যাচ্ছেন কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে নারী প্রধানমন্ত্রীরাই দেশ পরিচালনা করছেন। মাঝে ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দু'বছর ছাড়া পুরো সময়টাই নারীরা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত অধিকাংশ সময়ই বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও নারী দায়িত্ব পালন করেছেন। সংসদে এখন স্পিকারও নারী। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ একজন নারী রাষ্ট্রপতি পাবেন কিনা, সে নিয়ে নানারকম আলাপ-আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগে এরকম নারী রাষ্ট্রপতি হওয়ার মত যোগ্য এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা সংখ্যা কম নয়।

নারী রাষ্ট্রপতি হওয়ার ব্যাপারে যে আলাপ-আলোচনা চলছে সে আলাপ-আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন নিঃসন্দেহে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। যেহেতু এর আগে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন স্পিকারের পদ থেকেই, সেজন্য অনেকেই ধারণা করছেন শেষ পর্যন্ত হয়তো সেই শারমিন চৌধুরীকেই রাষ্ট্রপতি পদে দেখা যেতে পারে। তবে অনেকে মনে করেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন এবং সামনের পার্লামেন্ট হবে আরও কঠিন। এ অবস্থায় শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্পিকার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করাটা বেশি জরুরি বলে কেউ কেউ মনে করেন।

রাষ্ট্রপতি হিসবে বেগম সাজেদা চৌধুরীর নাম ছিলো। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকার কারণে এখন আর বিবেচনায় নেই। কারণ বেগম সাজেদা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ যে রাষ্ট্রপতির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ গ্রহণের সক্ষমতা তার এখন আপাতত নেই বলেই অনেকে মনে করেন।

বেগম মতিয়া চৌধুরীর কথা আলোচনা করেন অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন যে, বেগম মতিয়া চৌধুরী বিশ্বস্ত, শেখ হাসিনার শেখ হাসিনার পছন্দের ব্যক্তি। কিন্তু মতিয়া চৌধুরী সমস্যা হলো তিনি ন্যাপ থেকে আসা। ন্যাপ থেকে আসা কেউ আওয়ামী লীগের হতে পারে না। এই বিবেচনায় মতিয়া চৌধুরীকে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি করা হবে কিনা, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত নারী রাষ্ট্রপতি হবেন নাকি অন্যকোনো পুরুষ রাষ্ট্রপতি হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে ভারত যখন দুইজন নারী রাষ্ট্রপতি করছে, তখন বাংলাদেশে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি পাবে কিনা সেটি এখন আলোচনার একটি বড় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।