ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪ |

EN

মাদকের থাবায় নাস্তানাবুদ দেশের তরুণ প্রজন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০২২

মাদকের থাবায় নাস্তানাবুদ দেশের তরুণ প্রজন্ম
বর্তমান সময়ে একটি সর্বগ্রাসী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মাদক। এটি একটি দেশ বা সমাজের অন্যতম মারাত্মক সমস্যা। বিশেষত আমাদের যুবসমাজের জন্য মাদক ও মাদকাসক্তি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও চোরাচালান সমস্যা দেশ-কাল, ধর্ম-বর্ণ, সমাজ নির্বিশেষে আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করছে। ধনী-দরিদ্র, উন্নত-উন্নয়নশীল কোনো দেশই মাদক সন্ত্রাস থেকে মুক্ত নয়। প্রতিনিয়ত এর বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য সম্ভাবনাময় জীবন। সমাজের যাবতীয় পাপাচার, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার অধিকাংশের মূলেই রয়েছে এই মাদক ও মাদকাসক্তি। মাদকের থাবায় নাস্তানাবুদ দেশের তরুণ প্রজন্ম। শহর থেকে গ্রাম, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই মাদক পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। মাদক এক নীরব ঘাতক। ধর্ষণ, খুন, চুরি, ছিনতাই, বিয়েবিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে মাদক। পাড়া-মহল্লায় উঠতি বয়সের কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো যে অপরাধমূলক কাজ করছে তার পেছনেও রয়েছে এই মাদক। এখন শুধু ছেলেরাই মাদক সেবন করছে তেমনটি নয়। গবেষণা বলছে, মাদকসেবীদের ১৬ শতাংশ নারী। মাদকাসক্ত হওয়া এবং ফলস্বরূপ চুরি,ছিনতাই,চাঁদাবাজি, ঘুম,খুন ইত্যাদি প্রায়ই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। মাদক কেনার টাকা না পেয়ে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে খুন হচ্ছেন বাবা-মা। ভাইয়ের হাতে খুন হচ্ছেন ভাই বা বোন। টাকা না পেয়ে মায়ের অলংকার চুরি করে তা বিক্রি করে দিচ্ছে মাদকাসক্ত ছেলে। কেউ কেউ চাঁদাবাজি করছে। কেউ বা করছে ছিনতাই। কেউ করছে শিশু অপহরণ যেন মুক্তিপণের টাকা দিয়ে মাদক কিনতে পারে। এভাবে মাদকের কারণে দেশের তরুণেরা বিপথগামী হচ্ছে। মাদক প্রতিরোধে পরিবারকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ এক দিনে কেউ আসক্ত হয়ে পড়ে না, লেগে যেতে পারে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর। তাই পরিবার সচেতন হলে মাদকাসক্ত হওয়ার অনেক আগেই এটাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পারিবারিকভাবে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে তাঁদের সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে। জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন আসছে তাদের মধ্যে। কৈশোর থেকে যুবক বয়স পর্যন্ত মা-বাবাকে সন্তানদের বেশি বেশি সময় দিতে হবে। খেলাধুলাসহ নানা চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

মাদকাসক্তি একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা। এ ব্যাধি দূর করতে দরকার সমন্বিত কর্মপ্রয়াস। সরকারের একার পক্ষে এর নিরসন সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। পরিবার ও সমাজজীবন থেকে মাদকদ্রব্য উত্খাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ কিশোর ও তরুণ। মাদকাসক্তদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকে আসক্ত।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। আর দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোরেরাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ অনুযায়ী, অ্যালকোহল ছাড়া অন্য কোনো মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, কেনা, বিক্রি, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যাবে না। এই আইন ভঙ্গকারীদের জন্য যাবজ্জীবন থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অথচ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাদকের অবাধ ব্যবসা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাকের ডগায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা বড়ি, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। দফায় দফায় অভিযান পরিচালনার পরও কোনো না কোনো উপায়ে মাদকের ব্যবসা চলছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপর।অদুর ভবিষ্যতে যার ফলাফল হবে অত্যন্ত বিপদজনক ও ভয়াবহ।

আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সর্বনাশা এই মাদক থেকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। তাই রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও সচেতন হতে হবে। ''চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আসুন-সর্বগ্রাসী মাদকের বিরুদ্ধে নিজে সতর্ক হই ও পরিবারকে সচেতন করি। পাশাপাশি অন্যদেরও মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি।

লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী