ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

১০০০ কিমি পায়ে হেঁটে বাবা-ছেলের রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২২

১০০০ কিমি পায়ে হেঁটে বাবা-ছেলের রেকর্ড
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদেক আলী সরদার। কনকনে শীত উপেক্ষা করে মহৎ উদ্দেশ্য সফলের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকেনিয়ে নিয়মিত হেঁটে চলেছেন গাইবান্ধা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা। তারা জানান, পায়ে হেঁটে ভ্রমণে বেরিয়ে বাবা-ছেলে দেখেছেন এসব জেলার প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, সফল উদ্যোক্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যে তারা ১০০০ কিলোমিটরের বেশি পথ অতিক্রম করেছেন।

ছেলে মোস্তাফিজুরকে নিয়ে সাদেক আলী সরদার আরো পথ পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। আগামী মাসে পায়ে হেঁটে সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার দেখতে যাবেন বলে জানান তারা। তাদের এই দুঃসাহসিক হেঁটে চলা অভিযানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুক তথা দেশের বিভিন্ন এলাকায় টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিনত হয়েছে।

সাদেক আলী সরদারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা পৌরসভার মধ্য গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা সাদেক আলী সরদার। ছিলেন সেনাবাহিনীর অনারারি ক্যাপ্টেন (প্যারা কমান্ডো)। ২০০৬ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। আর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকার চাকরি ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে গাইবান্ধায় ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে সেনাবাহিনীর মেজর পদে কর্মরত।

সাদেক আলী সরদার ও মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুরুর আগের দিন গন্তব্যের স্থান ঠিক করেন দুজন। পরদিন খুব ভোরে বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়েন তারা। গন্তব্যে পৌঁছার পর আবার বাড়ি পৌঁছান হেঁটেই। তবে বেশি দূরে গেলে তারা ফেরেন যানবাহনে। এভাবে তারা এক হাজার কি.মি. পথ পাড়ি দিয়েছেন যা হিসাব করে রেখেছেন তারা। নিয়মিত ফেসবুকে আপডেটও দিচ্ছেন।

বাবা-ছেলের দেওয়া তথ্যমতে, কোনো একটা উদ্দেশ্য সফলের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম যাত্রা শুরু করেন সাদেক আলী সরদার ও মোস্তাফিজুর রহমান। তারা গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা, একই উপজেলার আনন্দবাজার, বালাসীঘাট, কালির বাজার, বুড়াইল, পুরাতন ফুলছড়ি ঘাট ও বোঁচার বাজার, সদর উপজেলার ত্রিমোহিনী, তুলসীঘাট, বাদিয়াখালী, কামারজানী, তালুক বুড়াইল গ্রামে খাঁজা হাজির খামার ও সোনাইডাঙ্গা গ্রামে ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফার বাড়ি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর, একই উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি ও হরিপুর ইউনিয়নে নির্মাণাধীন বহুল আলোচিত তিস্তা সেতু দেখে বেলকা হয়ে ধুপনী, পলাশবাড়ী উপজেলা শহর, সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর ও কয়েক’শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী জামালপুর শাহী মসজিদ, সাঘাটা বাজার ও বোনারপাড়া, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাট ও ঐতিহাসিক রাজাবিরাট এলাকায় রাজ পরিবারের প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, রংপুর জেলা শহর, একই জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মাদারগঞ্জ ও পীরগাছা উপজেলা, বগুড়া জেলা শহর, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার মুঘল বা সুলতানী আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক নিদর্শন সুরা মসজিদ ও হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) লালমনিরহাট পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে ১০০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেন দুই বাবা-ছেলে। রংপুর শহরে যেতে তাদের সময় লাগে ১৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিট ও বগুড়ায় যেতে সময় লাগে ১৫ ঘণ্টা ১০ মিনিট। এর আগে আরও বিভিন্ন সময়ে বেশ লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছেন এ দুজন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে পৌঁছানো লক্ষ্যে কয়েকদিন আগে গাইবান্ধা থেকে হেঁটে রওনা দেব আমরা। সেখানে পৌঁছে মাজার, ক্যান্টনমেন্ট ও প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দেখব। কেন এত বেশি হেঁটেছেন প্রশ্ন শুনে সাদেক আলী সরদার বলেন, একটি মহৎ উদ্দেশ্যে আমরা বাবা-ছেলে হাঁটছি। বলা যেতে পারে সেই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পূর্বপ্রস্তুতি এটি। ছেলে মোস্তাফিজুর বলেন, বাবা ছেলের সম্পর্ক গভীর হলে হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেয়া সম্ভব কিন্তু সম্পর্কের ঘাটতি হলে একছাদের নিচে থাকা অসম্ভব।।

সাদেক আলী সরদার আরো বলেন, আমাদের এই যাত্রা পথে বেশ কয়েকজন হেঁটেছেন অনেক টা পথ। চলতি পথে দিয়েছেন অনুপ্রেরণা, দিয়েছেন সাহস। হাঁটলে শরীর ভালো থাকে জানিয়ে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের ডা. নাঈম বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অবসাদ, ক্লান্তি সহ, বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্থুলতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ। ফলে বেশি বেশি হাঁটাহাটি ও শরীর চর্চার পাশাপাশি পরিমিত খাদ্যাভাস গড়ে তুললে দেহে পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও শরীর কর্মক্ষম হয় এবং রোগমুক্ত জীবন যাপন সম্ভব।