ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

ফুলবাড়ীতে বেকার যুবকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কৃষি উদ্যোগক্তা আব্দুল মজিদ।

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২২

ফুলবাড়ীতে বেকার যুবকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কৃষি উদ্যোগক্তা আব্দুল মজিদ।
প্রতি বছর আনেক তরুন-তরুনী উচ্চশিক্ষা শেষ করে কর্মসংস্থান না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এদিক খেয়াল করে সরকারী ভাবে উদ্যাক্তা তৈরীতে নানা রকম প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্ম মধ্যবিত্ত বেকার যুবকদের পড়াশুনা শেষ করে নিজেদের সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে,এতে আনেকেই পড়ছেন চরম দুশ্চিন্তায়। সেখানে নিজের প্রচেষ্টা আর পরিশ্রমে একইসাথে মাছ,মুরগী এবং গরু পালন করে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কৃষ্ণপুর গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর মৃত গেলাম মোস্তফার ছেলে সফল উদ্যোক্তা পৌর কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল মজিদ মন্ডল।

বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়ীত্ব পড়ে তার কাঁধে। মজিদ মন্ডল তার বাবার রেখে যাওয়া কৃষি জমির সাথে রাস্তার দু’পাশের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে একইসাথে গরুর খামার,মাছের খামার,পোল্ট্রি ফার্ম এবং বায়োগ্যাস সহ কৃষি উৎপাদনের জন্য ব্যক্তি মালিকানায় একটি সেচ পাম্প করেছেন। এ যেন একের মধ্যে অনেক কিছু। শুরুতে পুজি স্বপ্লতা থাকলেও এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বী তিনি। আব্দুল মজিদের কৃষি খামারের সাফল্য দেখে, বর্তমানে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকুরির পিছনে না ছুটে অনেকেই উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখছেন। তার এই সফলতা দেখে উৎসাহিত হয়ে পাশেই তাঁর মতো করেই একইসাথে মাছ ও পোল্ট্রি খামার তৈরী করেছেন মকলেছুর রহমান নবাব নামে একজন যুবক।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কৃষ্ণপুর গ্রামের পাশে পাঁচ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন মাইশা ডেইরী ফার্ম ও সিজান পোল্ট্রি ফার্ম নামে দুটি খামার। এই খামারের সাথে রয়েছে দুটি পুকুর, সেখানে ছাড়া রয়েছে দেশী জাতের মাছ,শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া এবং খামারসহ পুকুরের পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য ব্যক্তি মালিকানায় একটি গভীর সেচপাম্প,খামারে কর্মরতদের রান্নার জন্য একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট রয়েছে ।

খামারের চার পাশ দিয়ে চাষ করা হয়েছে হরেক রকমের সবজি,কিছু জমিতে ভুট্টা এবং ধান। ডেইরী ফার্মে রয়েছে ৫০টি গরু,পোল্ট্রি ফার্মে রয়েছে ১০ হাজার লেয়ার জাতের মুরগী।

নিজের এই সফলতার মূলমন্ত্র কি জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ জানান, তিনি লেখাপড়া শেষ করে ঢাকার নারায়নগঞ্জে শক্তি ফাউন্ডেশন নামে একটি বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন। ছোটবেলা থেকেই উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তাই সে চাকুরি ছেড়ে যুব উন্নয়ন থেকে পশু পালনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ঋনের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোন ঋণ না পেয়ে, চাকুরীতে থাকাকালীন জমানো বেতনের ৭০ হাজার টাকা দিয়ে প্রথমে ছোট আকারে একটি পোল্ট্রি খামার শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। ধিরে ধিরে ডেইরী খামার,মৎস্য খামার,পোল্ট্রি ফিড ব্যবসা সহ বর্তমানে আব্দুল মজিদ একজন পরিপূর্ণ খামারী,আদর্শ কৃষক সর্বোপরি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং সফল উদ্যোক্তা। এখন প্রতি বছর এই খামার থেকে তার আয় হয় প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকা,তার খামারে এলাকার বেশকিছু যুবকদের কর্ম সংস্থানও হয়েছে। সেখানের নিয়োমিত ও অনিয়োমিত মিলে প্রায় ২০জন কর্মচারী কাজ করেন। বর্তমানে তিনি ফুলবাড়ী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল নির্বচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আজ স্বপ্ন যেন তার হাঠের মুঠোয়।

এদিকে আব্দুল মজিদের এই সাফল্য দেখে একদিকে যেমন নতুন নতুন খামার গড়ে উঠছে অন্যদিকে ওই এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য তৈরী হচ্ছে কর্মসংস্থানের নতুন পথ। সদ্য পোল্ট্রি খামার তৈরী করা মকলেছুর রহমান নবাব বলেন মজিদের এই উদ্যোগ দেখে তিনি উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ব্যবসার থেকে কৃষি খামার লাভজনক হওয়ায় তিনিও খামার তৈরী করছেন,একই ভাবে কৃষি খামার তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এলাকার অন্য যুবকরাও।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রবিউল ইসলাম জানান, খামার একটি লাভ জনক ব্যবসা। মজিদের মত আনেকেই খামার করে বেশ লাভবান হয়েছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠির লক্ষ্যে পশু পাখি লালন পালন করে উদ্যোক্তা তৈরী হতে প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে নানা রকম পরামর্শ,ঔষধ,প্রনদনা সহ আনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে, খামারীদের। যাতে করে তারা বিভিন্ন খামার করে নিজেদের প্রতিষ্ঠত করতে পারে।