ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

ঝিনাইদহের ১৫টি নদী এখন মরা খাল: হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২২

ঝিনাইদহের ১৫টি নদী এখন মরা খাল: হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ
শৈলকুপাসহ ঝিনাইদহ জেলার নদী দখল-দুষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ১৫টি নদী। এক সময়ের খরশ্রোত এসব নদীগুলো এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। অনেক জায়গাতে  দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে নদী ছিল। তাই বর্তমানে  নদীবক্ষে চলছে চাষাবাদ। সংস্কার না করায় তলদেশ ও নদীর দু’পাড় ভরাট করে একটি কুচক্র মহল বাড়ি ঘর ও দোকানপাট গড়ে তুলেছে। সরকার সারা দেশে  বিভিন্ন নদীর উপর অবৈধস্থাপনা  উচ্ছেদ করলেও  তার তেমন  কোন প্রভাব পড়েনি ঝিনাইদহের ১৫টি নদীতে।  যার কারণে নদী দখলের উৎসব কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া  নবগঙ্গা, কালী, কুমার, ডাকুয়া, চিত্রা, বেগবতী (ব্যাঙ), কপোতাক্ষ, ফটকি, ভৈরবসহ ১৫ নদ-নদী এরইমধ্যে অনেকটাই অস্থিত সঙ্কটে ভুগছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নবগঙ্গা, বেগবতী ও ফটকি নদী। এর মধ্যে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা। এ নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় ভবন। নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিলাসবহুল রিসোর্স সেন্টার। কেও কেও করছেন শখের বাগান।। হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীতে ইরি ধানের আবাদ করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গৌরময় স্মৃতি বিজড়িত ঝিনাইদহ সদর উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বিষয়খালী বাজার। এ বাজার গড়ে উঠেছে বেগবতি নদীর পাশে। ঐতিহাসিকভাবে এ নদীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

কালের বিবর্তনে এখন এ সকল  নদী  বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। অনেক এলাকায়  নদীর জায়গা দখল করে মার্কেট, বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। নদী বক্ষে চলছে ধান চাষ। একইভাবে সদর উপজেলার হাজিডাঙ্গার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীতেও ধান চাষ করা হচ্ছে। সদরের সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা, হাজরা, গান্না, গোবিন্দুপুর, কোটচাঁদপুরের ধোপাবিলা, লক্ষিপুর, ওয়াড়িয়া ও শিরনগর, গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদীর অর্ধৈক জায়গা এলাকার প্রভাবশালীরা ৯৯ বছরের লীজের কথা বলে দখল করে পুকুর  করাসহ চাষাবাদ করা হচ্ছে। এই নদীর কালীগঞ্জ অংশেও নদীর জায়গা দখল করে দোকান ও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহেশপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কপোতাক্ষ, ভৈরবা, ইছামতী, কোদলা ও বেতনা। কোদলা নদীর জায়গা দখল করে বড় বড় পুকুর তৈরি করা হয়েছে এবং ধান চাষ করা হচ্ছে। কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে বুড়া ভৈরব নদ ও বেগবতী (ব্যাঙ) নদ-নদীর জায়গা দখল করেছেন এলাকার ৫৩ দখলদার। তারা মার্কেট, বাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। দুই পাড়ের জায়গা দখল করে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।  ইতোমধ্যে সরকার কিছু অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও   সেইসব জায়গা আবার দখলকরার পায়তারা করছে এলাকার একটি প্রভাবশালী  মহল।
শৈলকুপা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গড়াই, কালী নদী ও কুমার নদ। বর্তমানে নদী বক্ষ থেকে মাটি ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে হিড়িক পড়ে গেছে। এ নদীর দুই ধারের জায়গা দখল করে বাড়ি, মার্কেট ও বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি নদীর ভেতর থেকে মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। কুমার নদের শৈলকুপা অংশের বারইপাড়া,  নিচিন্তপুর, বোয়ালিয়া,কবিরপুর, বিজুলিয়া, ফাজেলপুর  রয়েড়া  মিনগ্রাম, বগুড়ার অংশসহ বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। এসব জেগে ওঠা চরে চলছে কলাই, মসুর, ধান,  পিয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। খননের অভাবে জেগে ওঠা চরে চরানো হচ্ছে গবাদি পশু। বর্তমানে  ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত অধিকাংশ নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে চলছে দখলবাজি। যে যার মতো নদী ব্যবহার করছেন ইচ্ছে মতো। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন অনেকটা উদাসহীন বলে অভিযোগ  করছে এলাকাবাসীরা। এব্যপারে  নিচিন্তপুর গ্রামের  জোহাদ আলী জানানা,  একশ্রেণির  এলাকার প্রভাবশালীব্যাক্তিরা এসব নদী দখলের সাথে জড়িত।  অনেকেই প্রতিবাদ করতে চাইলেও  ভয়ে প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকে।

এ ব্যাপারে  শৈলকুপা  উপজেলা নির্বাহী অফিসার  কানিজ ফাতেম লিজা জানান, নদীর জায়গা দখল  বা বালু উত্তোলনের অভিযোগ আমি পাইনি । অভিযোগ পেলে  যতবড় প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ভাবে  ব্যবস্থা নিব।