'সরকার আমাগো একটা ঘর দিছে, আমি ও আমার মা সেই ঘরে বসবাস করছি। আমি এই ঘরে বসে পড়া লেখা করছি। এখন ঘরটা ভেঙে গেলে আমাদের আর থাকার কোনো জায়গা নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাই— ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার।'- এ আকুতি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমাইয়ার।
বরগুনার আমতলী উপজেলায় গুলিশাখালী নদীর তীব্র ভাঙনে বিলীনের পথে সরকারের দেওয়া মুজিববর্ষের ঘর। নদীর ভাঙনে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে বসবাস করছেন এই ঘরের বাসিন্দা রাশিদা ও তার পরিবারসহ নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা। সুমাইয়ে রাশিদার মেয়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, আমতলীর গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামসংলগ্ন গুলিশাখালী নদীর তীরে অসহায় বাস্তুভিটাহীন রাশিদার জন্য সরকার প্রায় দুই বছর আগে মুজিববর্ষের ঘর নির্মাণ করে দেয়। গুলিশাখালীর এই তীব্র নদীর ভাঙনে ভয় ও আতংকের মধ্যে বসবাস করছেন রাশিদা ও তার পরিবার।
ভুক্তভোগী রাশিদা জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হলে বাস্তুভিটাহীন হয়ে পড়বে অসংখ্যা মানুষ। আর আমার একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এই ঘরটুকু ছাড়া আর কোনো সহায় সম্বল নেই। আমার ঘরডা ভাইঙ্গা গেলে আমাদের আর থাকার কোনো জায়গা নাই। আমাদের রাস্তায় থাকা ছাড়া কোনো উপায় নাই।
কলাগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মো. শানু বলেন, বসতঘরসহ দোকানঘর ও ফলদ বৃক্ষ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি কলাগাছিয়ার পুরনো বাজারটিও ভাঙনের তীব্রতায় এতই বেশি বর্তমানে ওই গ্রামের বৃহৎ একটি অংশ নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, আমি বিভিন্ন ঝামেলার কারণে ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি; কিন্তু শুনেছি। তবে ঘর ভাঙেনি নদীর পাড় ভেঙেছে। যারা মুজিববর্ষের ঘর করছে তারা করার সময় ভুল করছে। নদীর এত কাছে ঘর তৈরি করা উচিত হয়নি। মুজিববর্ষের এই ঘরগুলো আমার আমলে তৈরি হয়নি। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ভারতে ট্রেনিং থাকায় আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। বুধবার আমি ভারত থেকে এসেছি। এসেই বিষয়টি ডিসি স্যারকে অবহিত করেছি। খুবই শিগগির সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই বাসিন্দাকে পুনর্বাসন করা হবে এবং নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ওখানে যে বাসিন্দা রয়েছেন তাকে অন্য স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা ছাড়া নদীভাঙন রোধে আমরা সবসময়ই ওয়াটার ডেভেলপমেন্টকে বলে থাকি। যেখানে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, সে বিষয়ে তারা নলেজে নিচ্ছে। নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা তাদের বলেছি, শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।