ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, মে ২৯, ২০২৩ |

EN

শিশুদের মোবাইল আসক্তি ও অভিভাবকদের দায়বদ্ধতা

জিহাদ হোসেন রাহাত | আপডেট: বৃহস্পতিবার, মে ১১, ২০২৩

শিশুদের মোবাইল আসক্তি ও অভিভাবকদের দায়বদ্ধতা
বাংলাদেশে আধুনিকতার নামে শুরু হয়েছে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার নতুন এক সংস্কৃতি। শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার বিষয়টি নব্য এ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দেখছেন অনেক অভিভাবক। তবে স্মার্টফোন আসক্তি ও সেটির ভয়াবহতা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে জানেন না- অভিভাবকদের অধিকাংশই।

এইতো গত ২৯ এপ্রিলের কথা, লক্ষ্মীপুরের একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যাপক জিয়াউল হক জিয়া নিজের ফেসবুক একাউন্টস ওয়ালে 'ছোটটা মাথা তুলে দেখতে পারে না, কিন্তু কান পেতে ঠিকই শুনে' ক্যাপশনে করেন একটি পোষ্ট। লেখাটির সাথে জুড়ে থাকা ছবিতে দেখা যায় প্রায় সাত জন শিশু শুনছে ও দেখছে একটি স্মার্টফোন। দেখছে কার্টুন, খেলছে গেমস। তার সেই পোষ্টে আবার বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু ও নবজাতক সার্জন ডা. কাজী মোঃ নুর-উল ফেরদৌস লিখেন, "ওদের হাতে মোবাইল /ট্যাব দিয়ে আমরা এখন আনন্দে হাসি, কিন্তু এটাই এক সময় আমাদের কান্নার কারণ হবে"।

এখন প্রশ্ন হলো সত্যিই কি এটি আমাদের কান্নার কারণ হবে? নাকি নিছক কল্পনা! - না এটি কল্পনা নয়। বাস্তবতা পরিমাপ করেই বলছি অদূর ভবিষ্যতে এটি আমাদের জন্য হবে কান্নার কারণ। শিশুদের এই মোবাইল আসক্তি তৈরি করবে আগামীর বাংলাদেশের জন্য একটি অলস প্রজন্ম। যার জন্য দায়ী থাকবে অভিভাবক মহলসহ দেশের সকল পক্ষ। সংশ্লিষ্টদের বেখেয়ালি অবস্থানের কারণে আগামী দিনে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে একটি অলস প্রজন্ম সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

বর্তমানে দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ অভিভাবক সন্তানদের খাওয়ানো, কাপড়চোপড় পরানো, ছোটো কোনো কাজ করানো, কোথায় বেড়াতে যাওয়া, কিংবা গৃহস্থালির জিনিসপত্র কেনার জন্য হাট-বাজারে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা কিংবা অন্যদিকে ফেরাতে স্মার্টফোনে কার্টুন-গেম খেলার সুযোগ করে দেন। অথচ এটির কারণে যে সুদূরপ্রসারীভাবে শিশুদের উপর নেতিবাচক পড়ছে -সেটি বুঝতে পারছেন না আমাদের অভিভাবকরা। অভিভাবকদের যে নিজ সন্তানদের আবেগ-অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করা উচিত -সেটিও বুঝতে পারেন না অনেক অভিভাবক। তবে সন্তানদের সাথে অভিভাবকদের মানসিক বন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়৷ এমনকি সেটি দীর্ঘমেয়াদী সুফলও নিয়ে আসে। অধিকাংশ অভিভাবক বাচ্চাদের বিদ্যালয় প্রদত্ত বাড়ির কাজ এবং লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়ানোর বিনিময় হিসেবে স্মার্টফোনে কার্টুন-গেম খেলার সুযোগ করে দেন। এমনটি করে সাময়িকভাবে অভিভাবকরা সুফল পেলেও সম্মুখীন হন দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির। আবার যেসব বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি তাদের বেলায় দেখা যায়- খাবার খাওয়ার শর্তে অভিভাবকরা দিয়ে বসেন স্মার্টফোন। এক কথায় বলতে গেলে দায়হীনভাবে চলছে এ ব্যবস্থা।

খাবার খাওয়ানোসহ প্রায় ছোটো-বড়ো সকল কাজে অভিভাবকদের "স্মার্টফোন" শর্ত ডেকে আনছে মহাবিপদ। স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে শিশুদের সাথে পারিবারিক খোশগল্প, মাঠে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা কিংবা মজার কোনো আসর জমানোর বিকল্প নেই। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতিদিন শুধু পাবজি নামক ভিডিও গেমটি খেলছে প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ। এ সংখ্যার অধিকাংশই শিশু ও কিশোর। যা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা মাত্র। এক্ষেত্রে সরকারসহ সকল পক্ষ সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকে এটির জন্য কঠিন মূল্য চোকাতে হবে।