ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, মে ২৯, ২০২৩ |

EN

লক্ষ্মীপুরে একাত্তরের বধ্যভূমি-গণকবর কেন অরক্ষিত?

জিহাদ হোসেন রাহাত | আপডেট: শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩

লক্ষ্মীপুরে একাত্তরের বধ্যভূমি-গণকবর কেন অরক্ষিত?
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি বিজয়। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পাই স্বীকৃতি। হানাদারদের সাথে লড়াইয়ে প্রাণ হারায় ৩০ লক্ষ মানুষ। ইজ্জত লুন্ঠিত হয় প্রায় ২ লক্ষ মা-বোনের। পুরো দেশে চলে তান্ডব। চলে নরকীয় হত্যাযজ্ঞ। তৈরি হয় দেশের আনাছে-কানাছে অসংখ্য বধ্যভূমি। দেশে মোট কতটি বধ্যভূমি রয়েছে তার সঠিক হিসেব নেই কারো কাছে। সরকারি উদ্যোগে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কিছু বধ্যভূমি চিহ্নিত হওয়া পূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও রক্ষিত হলেও এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুরের বধ্যভূমিগুলো। প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী জেলায় ২টি বধ্যভূমি, ৪টি গণকবর ও ৩টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সঠিক তথ্য থাকার পরেও সংরক্ষিত হচ্ছে না গণকবর ও বধ্যভূমি গুলো। ইতিহাস বিজড়িত এসব স্থান কিছুটা রক্ষণাবেক্ষন করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। 

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের লক্ষ্যে এ জেলা থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়েছিলো অনেক নওজোয়ান। ঘটনা ক্রমে তারা ফিরে আসার আগেই রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুরে নারকীয় তাণ্ডব চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় রাজাকার,আলবদর, আল-শামস বাহিনী। সেসময়কার অনেক আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের মানুষ চিনলেও সামাজিকভাবে তাদের প্রজন্মকে বয়কট করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বাসঘাতক দালালদের কারণে সংগঠিত হওয়া গনহত্যা থেকেই তৈরি হয় এসব গণকবর ও বধ্যভূমি। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও সুরক্ষিত হওয়া তো দুরে থাক নির্ধারণ পর্যন্ত হয়নি এগুলোর মধ্যাকার বেশ কয়েকটির সীমানা প্রাচীর। 

তেমনি একটি গণকবর হলো লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার শতবর্ষী রায়পুর এল,এম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন গণকবরটি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিজেদের ক্যাম্প হিসেবে দখল করে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানটি। রাজাকারদের সহযোগিতায় পুড়িয়ে দেয় এখানকার অসংখ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ী। ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। ধর্মের নামে সংখ্যা লঘু হিন্দুদের জমি দখল করে বিতাড়িত করা হয় তাদেরকে। বাস্তুহারা হয়ে সেসব হিন্দু পরিবার পাড়ি জমায় দেশ ও প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু হিন্দুরা নয় নির্যাতিত হয় অনেক মুসলিম পরিবার। গুলি করে হত্যা করা হয় কেরোয়া গ্রামের সেরাজুল হক নামে এক বৃদ্ধসহ অনেককে । তবে দুঃখের বিষয় হলো এসব হত্যাকান্ডে জড়িত রাজাকার পরিবার ও তাদের প্রজন্মকে এখনো বয়কট করতে পারেনি স্থানীয় সাধারণ মানুষ। গণহত্যাযজ্ঞের কারণে তৈরি হয় রায়পুরে এই গণকবর। স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও সুরক্ষিত ও সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি এটির। কেন নির্ধারণ হয়নি তা দিয়েছে অজানা এক কৌতুহলের জন্ম।

শুধু এটি নয় এমন অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে দেশের কয়েক হাজার গণকবর, বধ্যভূমি। সেগুলোর সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। নয়তো হারিয়ে যাবে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস। হারিয়ে যাবে আমাদের ত্যাগ পূর্ণ স্বাধীনতার কথাগুলি। তাই অতিদ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহন করতে সরকারসহ সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।