ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪ |

EN

সন্তানকে বিদেশ পাঠানোর আগে ভাবুন

কলাম ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, মার্চ ৬, ২০২৩

সন্তানকে বিদেশ পাঠানোর আগে ভাবুন
অনেকদিন ধরে ভাবছি কানাডার ড্রাইভিং এর উপর লিখবো কিন্তু লেখা বড় হবে তাই আর লেখা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ আমার এই লেখা।

কানাডাতে ড্রাইভিংয়ে আপনি কতটুকু দক্ষ সেটি নির্ভর করবে আপনি কতটুকু আইন, নিয়ম ও রোড সাইন মেনে গাড়ি চালান তার উপর। নিজের দেশে খুব ভাল ড্রাইভ করতেন সেটি এখানে মুখ্য বিষয় না, আর এজন্যই এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া খুবই কঠিন। 

পূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এখানে কয়েকটি ধাপ আপনাকে পার করতে হবে।

ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সের সর্বপ্রথম ধাপ G1 লাইসেন্স। এই G1 লাইসেন্স পেতে আপনাকে ২০০ এর উপর কানাডিয়ান ড্রাইভিং আইন, নিয়ম ও রোড সাইন জানতে হবে এবং তার উপর পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষাতে ৪০টি প্রশ্ন আসবে যার কমপক্ষে ৩৬টির সঠিক উত্তর দিতে হবে। তবেই আপনি G1 পাশ করবেন। এই লাইসেন্স পেলেও আপনি একা গাড়ি ধরতে পারবেন না।
 
G1 লাইসেন্স পাওয়ার ঠিক এক বছর পর আপনি G2 লাইসেন্স পরীক্ষার অনুমতি পাবেন। আর এই এক বছর আপনাকে কোন ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর বা ২১ বছর উর্ধ্বে যেকোন G লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে ড্রাইভিংসহ সকল নিয়ম ও রোড সাইনগুলো প্রাক্টিক্যাল শিখতে হবে। 

G2 পরীক্ষার দিন ইন্সট্রাক্টর এর গাড়ি নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে হবে। তখন আপনার পাশের সিটে একজন পরীক্ষক বসবেন এবং আপনি তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ৩০মিনিট ড্রাইভ করবেন। এই ৩০ মিনিটে সামান্য পরিমাণ ভুল করলে পয়েন্ট কাটবে এবং পয়েন্ট কমতে কমতে পাশ মার্কের নীচে চলে গেলে আপনি ফেল। আর যদি বড় কোন ভুল করেন তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে ফেল। যতদিন আপনি পাশ না করবেন ততদিন আপনাকে ডলার খরচ করে পরীক্ষা দিয়েই যেতে হবে।

এই G2 পাশ করলে আপনি গাড়ি কিনতে পারবেন, এর আগে নয় এবং শুধুমাত্র সিটির মধ্যে গাড়ি চালানোর অনুমতি পাবেন। কিন্তু হাইওয়েতে উঠতে পারবেন না। 

G2 লাইসেন্স নিয়ে একবছর ড্রাইভ করে G লাইসেন্স পরীক্ষার অনুমতি পাবেন। ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতে এটাই সর্বোচ্চ লাইসেন্স, যা দিয়ে আপনি পুরো কানাডা, আমেরিকার যেকোন রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন। 

G লাইসেন্স পরীক্ষার দিন ঠিক আগের মত আবার একজন পরীক্ষক আপনার পাশে বসবেন এবং তার দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন আইন কানুন মেনে ড্রাইভ করতে থাকবেন এবং হাইওয়েতে গাড়ি নিয়ে উঠবেন। 

এই হাইওয়েতে রাস্তাভেদে প্রতিটি গাড়ি কমপক্ষে ১২০ কিঃমিঃ বেগে চলে। প্রতিটি হাইওয়েতে উঠার ও নামার জন্য পাশ দিয়ে র‍্যাম্প থাকে। যে র‍্যাম্প দিয়ে গাড়ি অল্প গতি থেকে প্লেনের রানওয়ের মত গতি বাড়িয়ে বাকী অন্য সব গাড়ির সাথে একত্রিত হয়। আবার হাইওয়ে থেকে বাহির হওয়ার সময় এক্সিট র‍্যাম্পে ঢুকে ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে লোকালে বাহির হতে হয়। 

এভাবে ড্রাইভিং পরীক্ষা দেওয়ার পর যদি কোন ভুল না করেন তবেই আপনি G পাশ করতে পারবেন নতুবা নয়।

বাংলাদেশের মত একটু মুচকি হাসি, কিংবা সরি একটু ভুল হয়ে গিয়েছে বা দালাল ধরে টাকা দিয়ে আপনি পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন না এখানে। এমনও মানুষ আছেন যারা ৭/৮ বার পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেনা এবং তাদেরকে পুনরায় G1 দিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হয়। কারো কারো কাছে কানাডার ভিসা পাওয়ার চেয়ে ড্রাইভিং পাশ করাটা অনেক বেশী কঠিন ছিল। 

তাই এই দেশে যারা ড্রাইভিং পাশ করে তাদের রাস্তার আইন নিয়ম অন্তরে গেঁথে যায়। ইচ্ছা করেও আমরা কেউ রোড সাইন বা নিয়ম ভঙ্গ করিনা। 

এখানে গভীর রাতে যখন দুনিয়া ঘুমিয়ে থাকে এমনকি যেখানে সিসি ক্যামেরাও নেই সেখানেও আমরা কোন STOP সাইন দেখলে একা গাড়ি ব্রেক করি।

আইন ও নিয়মকে শ্রদ্ধা করে এই দেশে যাদের জন্ম তারা টিনএজ হলেও বেশীরভাগ নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় অথচ বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত স্টুডেন্ট আসে কেবলমাত্র তারাই বেশীরভাগ এখানে আইন ভঙ্গ করে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায় এবং এক্সিডেন্ট করে। এদের রক্ত এতই গরম যে অল্প বয়সে গাড়ি পেয়ে বাংলাদেশে যেমন গাড়ি চালাতো এখানে এসেও ঠিক তেমনই চালায়। 
 
পরিশেষে বলতে চাই, আপনারা যারা সন্তানকে বিদেশ পাঠান মানুষ করতে আর দেশ থেকে সন্তানের জন্য টাকার যোগান দেন তারা জেনে রাখুন সেই সন্তান কোনদিন বিদেশে মানুষ হবেনা। এখানে আপনাদের কষ্টের টাকা শুধু নষ্টই করবে। বরং তাদেরকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য ব্যস্ত রাখুন।

লেখক: মিয়া মিজানুর রহমান কাজল, অন্টারিও, কানাডা (ফেসবুক থেকে নেওয়া))