ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

পাঁচবিবিতে পরচুলার সাথেই জীবনগাঁথা শতাধিক নারীর

মোস্তাকিম হোসেন, পাঁচবিবি প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, জানুয়ারী ২, ২০২৩

পাঁচবিবিতে পরচুলার সাথেই জীবনগাঁথা শতাধিক নারীর
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে শতভাগ রপ্তানিমুখী পরচুলা তৈরীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানা।প্রায় অর্ধ শত কুটির শিল্প-কারখানায় হাতের বুননে পরচুলা তৈরী করছেন প্রায় শতাধিক নারী। বাড়িতে অলস বসে না থেকে বাড়তি রোজগার করে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন এখানকার নারীরা। তবে কুটির শিল্পগুলোর শতভাগ ট্রেড লাইসেন্স না হওয়ায় স্থানীয় সরকারগুরোর কোষাগারে এখনো জমা হয়নি কোনো রাজস্ব। 

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠা শতভাগ রপ্তানিমুখী পরচুলা তৈরীর প্রায় অর্ধশত কুটির শিল্প কারখানাগুলোতে কাজ ও বাড়তি রোজগারের সন্ধান পেয়েছেন গৃহবধূ ও তরুনীরা। শুধু তাই নয় গৃহবধূ ও তরুণীদের পাশাপাশি ছুটির অবসরটুকুতে রোজগার করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরাও।হাতের বুননের কারুকাজ দিয়ে পরচুলা তৈরী করা এসব শিল্পীরা আছেন তাই বেশ খোশ মেজাজে।

পাঁচবিবি পৌর এলাকার মাতাশমঞ্জিল,উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া,কাটাপুকুর শালাইপুর,জয়হার,সালাখুর, কুয়াতপুর ,মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের  বেলখুর,সড়াইল,শুকুরমনি, আটাপুর ইউনিয়নের উচাইসহ বিভিন্ন গ্রামের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরা বিভিন্ন জেলার উদ্যোক্তাদের নির্ধারিত ব্যক্তির মাধ্যমে অর্ডারকৃত কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে,পাঁচবিবি উপজেলার উচাই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একটি পরচুলা তৈরির কারখানায় ৩০ জন বিভিন্ন বয়সের নারী পরচুলা তৈরির কাজ করছেন। আবার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বেলখুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একটি পরচুলা তৈরির কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ২০ জন বিভিন্ন বয়সের নারী। এদের মধ্যে গৃহবধূ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন আকারের মাথার অবয়বে তৈরি এসব পরচুলার মূল উপাদান প্রসেসিং করা চুল উদ্যোক্তাগণ ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে কারখানাতে পাঠিয়ে দেন। কারখানায় বসে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের মাথার খুলির উপর বিশেষ ধরনের সুতার তৈরি নেট বসিয়ে ফারর্নিং ও নিডলের সাহায্য চুলগুলো স্থাপন করে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ পরচুলা বা হেয়ার ক্যাপ।

চুয়াডাঙ্গার ফারুক হোসেন তাঁর শ্বশুর বাড়ি বেলখুর গ্রামের ওই এলাকার নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে এই ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ শুরু করেন প্রায় এক বছর আগে।ফারুক হোসেন বলেন, এই কারখানাতে ৪৮ জন নারীর কাজ করার মতো সুবিধাদি থাকলেও বর্তমানে ২০ জন নারী কাজ করছেন। এখানকার তৈরি পরচুলাগুলো ঢাকায় চিনা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। যা পরবর্তীতে চিনে রপ্তানি করা হয়। 

সড়াইল এলাকার বাসিন্দা প্রভাষক নূরুজ্জামান পবন বলেন,পরচুলা তৈরীর শিল্পী ও উদ্যোক্তারা মোটামুটি একটা ভালো অবস্থান করে নিলেও এখনো শতভাগ নিবন্ধন বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সের আওতাভূক্ত না হওয়ায় কয়েকটি কারখানা বন্ধ হলে বিপাকে পড়েন এসব কারখানায় কর্মজীবিরা। এজন্য সরকারের নজরদারিও প্রয়োজন বলে জানান তিনি। 

পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জিহাদ মন্ডল জানান,এমন সমস্যা থাকা স্বত্তে¡ও নারীদের কর্মসংস্থান ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দেশী-বিদেশীদের বেশী করে সহায়তা দানের আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন। এ ছাড়া সহজ শর্তে ট্রেড লাইসেন্সে সহায়তারও আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জয়পুরহাট জেলার উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন,বেকার ও কর্মহীন আছেন এমন নারীরা ইচ্ছে করলে এ রকম কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করে আর্থিক ভাবে সফল হওয়াসহ স্বনির্ভরতা অর্জনে এগিয়ে যেতে পারে। জেলায় নারীদের পরচুলা তৈরির কাজ অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়া এ শিল্পের সাথে জড়িত পরচুলা শিল্পীদের প্রশিক্ষন ও উদ্যোক্তদের সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় এই কর্মকর্তা।