ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

কোন স্বার্থে কুবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে এতো দল-উপদল?

নাজমুস সাকিব, কুবি প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, নভেম্বর ২৮, ২০২২

কোন স্বার্থে কুবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে এতো দল-উপদল?
বরাবরের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতি নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা। পাস করে আসা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক, আঞ্চলিকতা কেন্দ্রিকসহ বিভিন্ন কারণে তারা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হচ্ছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য কয়েকজন অধ্যাপক বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস অনুযায়ী, মূলত শিক্ষক সমিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী নীল দলে এতো ভাগ হয়। যে দলের শিক্ষকেরা পদে আসেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন শাখার পরিচালক ইত্যাদির দায়িত্ব পাওয়া থেকে শুরু করে কিছুক্ষেত্রে অসৎ স্বার্থ হাসিলের জন্যেও উপাচার্যকে চাপ দিয়ে থাকেন। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন শুরু হয় ২০১২ সালে। সামনে একাদশ কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে মোটা দাগে দুইটি দল বিদ্যমান। ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সময়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তোফায়েল হোসেন মজুমদার মিলে একটি দল চালিয়েছেন। এই দলের সিনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষা ছুটিতে থাকায় ২০১৭ পরবর্তী অর্থাৎ ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে এই গ্রুপ চালাচ্ছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী ও অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার। 

অপরদিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের একটি দলের নেতৃত্ব দেন। যেটি মূলত কিছু উপদলের একটি মিশ্রণ। যেখানে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষকদের একটি অংশ, তাদের সাথে আবার দক্ষিণ বঙ্গের শিক্ষকদের নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: শামীমুল ইসলামের একটি উপদল এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীর নেতৃত্বাধীন একটি উপদলও এসে মিশেছে। এমন বেশ কয়েকটি উপদল মিলে তাহের-শামীম দলও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে আসছে। 

তবে এসব দল-উপদল যে সবসময় একই শাখায় যুক্ত থাকে তা না। পরিস্থিতি ও নানা স্বার্থের কারণে সেখানে পরিবর্তনও আসতে দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের ইতিহাস বলছে, অধ্যাপক ড. মো. তাহের, ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, ড. শামীমুল ইসলাম, ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ক্ষমতায় আসার জন্য অনেকবার দল পাল্টেছেন। কখনও নীল দলে থেকেও অন্য প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন, কখনও হলুদ দল বানিয়েছেন, কখনও বঙ্গবন্ধু পরিষদকে দুইভাগ করে আলাদা নির্বাচন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য অধ্যাপকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের ৭ জুলাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ গঠিত হয়। যার উদ্দেশ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য মতের শিক্ষকদের উপস্থিতি থাকায় সকল শিক্ষকদের জন্য ২০১২ সালে তৈরি করা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। 

গঠনতন্ত্র মোতাবেক একই বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে একটি, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দুর রহমানের নেতৃত্বে প্রগতিশীল শিক্ষক পরিষদ থেকে একটি ও বিএনপিপন্থী সাদা দল থেকে একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছিল। সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রায়হান উদ্দিন। এই নির্বাচনে ২০১২ সালের জুলাই মাসে হওয়া নির্বাচনে জয়ীরা ক্ষমতায় থাকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে একটি প্যানেল দেয়া হয়। সেই প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ  সৈয়দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান। এই নির্বাচনে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামিমুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু পরিষদে থাকলেও তারা সৈয়দুর রহমানকে নির্বাচনে হারানোর জন্য মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: আব্দুল্লাহকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করান এবং আব্দুল্লাহ জয় লাভ করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাদা দল থেকে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: মশিউর রহমান ও আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: ইমরান হোসেন জয় লাভ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসেন জয় লাভ করেন। 

পরবর্তীতে ২০১৫ সালে  বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থিত নীল দল থেকে সভাপতি প্রার্থী দেয়া হয়  পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী দেয়া হয় একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: তোফায়েল হোসেন মজুমদারকে। তারা উভয়ই নির্বাচনে জয় লাভ করে।  কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবু তাহের- শামীম গ্রুপ বঙ্গবন্ধু পরিষদে গ্রহণযোগ্যতা না পেয়ে ২০১৫ এর নির্বাচনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবার এবং শেষবারের মত হলুদ দল থেকে একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। সেই প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী  ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। তারা উভয়ই নির্বাচনে হারে।

 ২০১৬ সালে হলুদ দলের তাহের-শামীম গ্রুপ বঙ্গবন্ধু পরিষদে এসে যোগ দেন। এবং নীল দল থেকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ছিলেন নৃবিজ্ঞান