ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠা হয় ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ৪নং ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদ। তার পর যুগের পর যুগ পার হয়েছে। অথচ এখনো হয়নি পরিষদের নিজস্ব কোনো ভবন।
যে কারণে মাঝেমধ্যেই পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে দুটি বিদ্যালয়ের ভবনে। তাও আবার স্কুল বন্ধ রেখে। এতে একদিকে পরিষদের সেবাদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়ছেন সেবা নিতে আসা সেবাপ্রত্যাশীরাও। অন্যদিকে স্কুল ভবন দখলের ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকমতো চলছে না।
জানা যায়, ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকায় সেটির কার্যক্রম ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইউসুফদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভাওয়াল স্কুল মাঝেমধ্যেই বন্ধ রেখে পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আর ইউসুফদিয়া স্কুলের তিনটি শ্রেণিকক্ষ দখল করেও এ কার্যক্রম চলছে।
সূত্রমতে, ব্রিটিশ আমলে শুরু হয় ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। ১৯৮৭ সালে এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া। তার বাড়ি ইউনিয়নের ইউসুফদিয়া গ্রামে হওয়ায় নিজের সুবিধামতো তিনি ইউসুফদিয়া সরকারি কমিউনিটি হাসপাতালের কয়েকটি রুম দখল করে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। তখন থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই চলে পরিষদের সব কার্যক্রম।
২০১৬ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া। তার বাড়ি ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামে হওয়ায় তিনিও সুবিধামতো বাড়ির পাশে ভাওয়ালের কদমতলা বাজারে অস্থায়ী কার্যালয় ভাড়া নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
বর্তমানে কদমতলা বাজারে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও বেশিরভাগ জনসমাগমের সময় ভাওয়াল ও ইউসুফদিয়া স্কুল দখল করেই চলছে কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিতে আসা মানুষের ভিড়ে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কার্যক্রম।
ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লার বাবা চুন্নু বলেন, হঠাৎ করে সরকারি ছুটি ব্যতীত স্কুল বন্ধ করে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ করায় আমার ছেলে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে।
ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উম্মে সালমা বেগম বলেন, সরকারি এই জাতীয় কাজগুলো করতেই হবে। আর পরিষদের তেমন জায়গাও নেই। যার কারণে তারা আমাদের বিদ্যালয় পরিষদের কার্যক্রম করে। আমাদের এখানে স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ, ভোটার তালিকার ছবি তোলা, বয়স্ক-প্রতিবন্ধী বাছাই কার্যক্রম চলে মাঝে মাঝে। তখন আমরা সবাই উপস্থিত থাকি। তার পর শ্রেণিকক্ষে বন্ধ রেখে ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয় কাজগুলো করি। এতে বাচ্চাদের পড়ালেখায় একটু সমস্যা হয়। দৈনিক তো হয় না।
ভাওয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, জনগনের তৃণমূল সেবার কেন্দ্র হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। আমার ইউনিয়নে বোর্ড অফিস নেই। ২০১৬ সালে আমি চেয়ারম্যান হই। ২০১৭ সালে আমি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য জায়গা লিখে দিই ৩৫ শতাংশ। তবে এখনো কোনো ভবন পাইনি। জনগণের সেবা দিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক-প্রতিবন্ধী ভাতা বাছাই ও ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম যে কোনো একটা বিদ্যালয় গিয়ে করতে হয়। তখন স্কুল বন্ধ রেখে জনগণের এই সেবাটা দিতে হয়। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তেলোয়াত হোসেন বলেন, ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবন না থাকায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ করছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এখন ভোটার হালনাগাদ চলছে। পরিষদের ভবন থাকলে সুবিধা হতো। আমরা সেখানে কাজ করতে পারতাম। যেহেতু এটিও একটি জাতীয় কাজ। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রুম দিয়ে কাজ করা লাগছে। পরিষদ ভবন থাকলে আমাদের এটি করা লাগত না।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ বিষয়টি আরও একটু যাচাই-বাছাই করে দেখব। যেন জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের বিদ্যা অর্জন থেকে দূরে না যায়। দুটি বিষয়কে সমন্বয় করে সমাধান করা যায়, সে পথটি আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।