ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪ |

EN

জীবন-জীবিকার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন এনজিওকর্মীরা

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১০, ২০২২

জীবন-জীবিকার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন এনজিওকর্মীরা

প্রতীকী ছবি

প্রতিবছর সারাদেশে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা পড়াশোনা শেষ করে নতুন কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে নিজের যোগ্যতার উপর ভর করে অন্যের দারপ্রান্তে গিয়ে উপস্থিত হয়। কারণ, একটু নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য একটা ভাল চাকরির আশায়। আর এখানেই যত সমস্যা। কারণ, দেশে চাকরির চেয়ে বেকারদের সংখ্যা বেশি। 

পড়ালেখার খরচ কোনোমতে জুটলেও বিভিন্ন অফিসে ধর্না দেওয়া ও ব্যাংক ড্রাফট করাটা যেন দিন দিন মুশকিল হয়ে পড়ে এদের কাছে। সাথে তো খাওয়া ও থাকার বিষয়টি রয়েই গেল। যদিও অনেকে টিউশনি করে যে দু’এক টাকা আয় করে তা বলার মতো কতটা, তা সবারই জানা। তাই বেকারত্বের দুঃখ সেই লোকই বুঝে যে এর সাথে সময় কাটিয়েছে। সদ্য বেকার হওয়ার ফলে বাড়ি থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় অনেকের। 

একজন বেকার মানুষের জীবনে হতাশা নেমে আসে তখন। যখন বিভিন্ন চাকরির জন্য সরকারি বে-সরকারি দপ্তরে ঘুরে বেড়ায় চাকরি পাওয়ার আশায়। দিনের-পর-দিন, বছরের-পর-বছর ঘুরে সরকারি চাকরির বয়স পার করে দিতে হয় অনেককেই। 

মেয়েদের বেলায় হয়তো কিছুটা ভিন্ন চিত্র থাকলেও বেকরত্ব শব্দের তো কোন নারী-পুরুষ ভেদাভেদ অর্থ নেই। কোনো কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্ত স্বামীর ঘর কত জনেরই বা শান্তি বয়ে আনে।

নানাবিধ সমস্যা নিয়েই জীবনের সময় কাটাতে হয়। 

অনেকেরই যোগ্যতা থাকা সত্বেও  সংসারের চাপে, দু বেলা দু মুঠো খাবার জোগাড় করতে যেকোনো পেশা বেছে নিতে হয়। আবার কেউ কেউ হয়তো পেয়ে যাচ্ছে সোনার হরিণের দেখা। তাদের কথা নাই বা বলি। এমন হীনমন্যতায় তখন সংসার, বন্ধু মহল স্ত্রী-সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছুটে যায় বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান বীমা বা এনজিওর চাকরিতে। সেখানে কিছুটা স্বস্থি ফিরে পেলেও জীবনে আসে পরাধীনতা।

প্রতিদিন ভোর ৫ থেকে ৬টায় আরামের ঘুমকে হারাম করে বিছানা ছেড়ে , ফ্রেস হয়ে খাবার শেষ করতে না করতেই ঘড়ির কাটায় ৭টার বেল বাজে। সাইকেল চেপে যেতে হয় নির্ধারিত কেন্দ্রে। পরে কেন্দ্র হয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে শহরে কাজের তাগিদে যেতে হয়। শুনতে হয় বস, ক্লাইন্টদের কত কথা।

সদস্যরা টাকা নিয়ে আসবে কালেকশন করতে হবে, ৩/৪ টি সমিতির প্রায় ১ থেকে দেড়শ সদস্যের টাকা।
অনেক সময় সদস্য টাকা নিয়ে না এলে বাড়ি বাড়ি যেতে হয় কিস্তি আদায়ের জন্য। তারপরও কোনো কোনো দিন শতভাগ আদায় হয় না। এরকম করতে করতে ঘড়ির কাটায় বেজে যায় দুইটা থেকে তিনটা। 

আবার মাথায় রাখতে হয় লোন বিতরণের কথা, কাজের মাঝে ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার ফোনে বলে আজতো  লোন বিতরণ আপনার, আদায় কত?  নিয়ে আসুন। 

অফিসে পৌছে আর দুপুরে খাবার খাওয়া হয় না। বিতরণ শেষে  হিসাব নিকাশ দিতে গিয়ে ম্যানেজার তার শতভাগ আদায় না পেলে বকা দিয়ে বলেন, আজ আদায় না নিয়ে আসলে আমার বস কী কী বলবো?

যেখান থেকে পারেন টাকা নিয়ে জমা করেন। এভাবে না খেয়ে দিনের পর দিন সদস্যেদের বাড়ি গিয়ে টাকা আদায় করতে হয় এনজিওকর্মীদের। 

অফিসের ফিরে হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিতে রাত ৯-১০ টা বেজে যায়, তারপর বাড়ির পথে রওনা দেওয়া। 

দেখা যায় যেতে যেতে কোনোদিন ১১-১২ টা, পরে একটু ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া। তাও ১টার আগে নয়। 

নিজের থানা বা জেলায় চাকরির সুযোগ না থাকায় যেতে হয় অন্য জেলায়। তার উপর বেতনটাও বেশ সামান্য,  ১০-১৫ হাজার টাকা মাত্র। বাজারের মূল্য যেমন উর্ধগতি, তেমনি সারামাসই চিন্তায় কেটে যায়। কিভাবে চলবে সামনের দিনগুলো। বাসা ভাড়া, চিকিৎসার খরচ, পোশাক, যাতায়াত , খাবার খরচসহ, আবার শতভাগ টাকা আদায় না করতে পারলে ধার-দেনা করে সারা মাস কাটাতে হয়। 
বেতনের সব টাকা দিয়েও অভাব যেন মেটে না।

তারপর বৃদ্ধ মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তান সংসার খরচ লেখাপড়া, এ সকল খরচের ধকল যেন নিতে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি করতে হয়। 

বউ, ছেলে, মেয়ের কাছে বাবা হলো চাকরিজীবি। তাহেলে তারা কিভাবে বুজবে বাবা কেমন করে কাজ করে। সপ্তাহে একটা দিন ছুটি কাটানোর কথা, কিন্ত কোনোদিন তাও জোটে না, ছুটির দিনেও বকেয়া টাকা আদায়ের কাজ করতে হয়। কারণ, মাস গেলে যে টাকা অংকটা মেলাতে হবে। 

এভাবেই চলে একজন এনজিওকর্মীর জীবনচক্র। 

বর্তমানে বাংলাদেশে ২,৪৯৮টি এনজিও আছে।
বাংলাদেশে কাজ করছে ২৩৩টি বিদেশি এনজিও ।
বাংলাদেশে শিক্ষার হার কত? ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী - ৭৩.৯ শতাংশ ।

২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে নারী পুরুষের মোট শিক্ষার হার ৭১.৬৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষের কাজ আছে। এর অর্থ মাত্র ২৬ লাখ মানুষ বেকার। 

তবে জরিপেই বলা আছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করে কিন্তু কোনো মজুরি পান না, এমন মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১১ লাখ।

দেশে তরুণদের ১০ শতাংশ বেকার: আইএলও
২০২২ সালের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার দাঁড়াতে পারে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে। এটি বৈশ্বিক হারের সমান।

২০২২ সালে এই বয়সী তরুণ বেকারের সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২১ সালের চেয়ে তা কিছুটা কম (৭ কোটি ৫০ লাখ)। তবে ২০১৯ সালে প্রাক্-মহামারি সময়ের চেয়ে তরুণ বেকারের সংখ্যা এখনো ৬০ লাখ বেশি।

‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ’ বা ‘বিশ্বজুড়ে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রবণতা ২০২২’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে আইএলও এসব 
তথ্য দিয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশি তরুণদের বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, যদিও জাতীয় পর্যায়ের বেকারত্বের হার মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ। 

বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় তরুণদের বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৮১১, মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

সম্প্রতি একশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তাঁরা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ। চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণে নেই ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ।

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তরুণ জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার দাঁড়াতে পারে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে। এটি বৈশ্বিক হারের সমান। তবে এই অঞ্চলের সব দেশের অবস্থা এক নয়।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যেমন উন্নত দেশগুলো এগিয়ে আছে, তেমনি তরুণদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে যেমন তফাত আছে, তেমনি উচ্চ আয়ের দেশগুলোর সঙ্গেও তাদের পার্থক্য আছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশগুলো তরুণদের কর্মসংস্থানে প্রাক্-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাবে। তবে অন্যান্য দেশের তরুণদের বেকারত্বের হার প্রাক্-মহামারি সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি থাকবে।

মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ নেই, এমন তরুণের সংখ্যা বেড়েছে। তবে ২০২১ সালের তথ্য এখনো আইএলওর হাতে নেই। ২০২০ সালে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৫ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। তবে মহামারির ক্ষত শিগগিরই সারছে না আর তাতে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে আইএলও।

অন্যদিকে পুরুষের তুলনায় নারীদের অবস্থা খারাপ। ২০২২ সালে যেখানে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান থাকবে বলে পূর্বাভাস করা হচ্ছে, সেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার দাঁড়াতে পারে ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ তরুণীদের তুলনায় তরুণদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা দেড় গুন বেশি। নারী–পুরুষের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নিম্ন–মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বের মোট কর্মক্ষম মানুষের ৬০ শতাংশ (প্রায় ২০০ কোটি) নারী, পুরুষ ও তরুণ জীবন অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কাজ করেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষের নাজুকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই খাতে যারা কাজ করেন, তাঁদের বড় অংশই তরুণ। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীরা আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীদের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রে অনেক কম সুবিধা পান। সে কারণে এরা অনেক বেশি অরক্ষিত। তাদের এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ, মানসম্মত শিক্ষার অভাব।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা গেলে একেকজন শ্রমিকের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ প্রবাসী আয় পাওয়া সম্ভব। দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি বা মাথাপিছু প্রবাসী আয় সবচেয়ে কম।